কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন। ছবি: পিটিআই।
তৃণমূল যখন ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ে ভোট প্রচারে গিয়ে বারবার বাংলার উন্নয়নের মডেলের কথা তুলে ধরছে, তখন বাংলায় এসে কেরলকে মোদী সরকারের বিকল্প বলে দাবি করলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন। সরব হলেন, পঞ্চায়েত ও শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার দুর্নীতি নিয়ে। তৃণমূল অবশ্য একে দ্বিচারিতা বলে কটাক্ষ করেছে।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশে শুক্রবার বক্তব্য রাখেন বিজয়ন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি বেঙ্কট প্রমুখ।
বিজয়ন তাঁর ভাষণে আগাগোড়া কেরলের উন্নয়নের ‘মডেল’ তুলে ধরেন। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির উল্টোদিকে যদি কোনও বিকল্প থেকে থাকে তা হল কেরল। তিনি বলেন, “জনস্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা— কেরল সব বিষয়ে দেশের এক নম্বর রাজ্য। যেখানে দেশের সরকার একের পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিচ্ছে, তখন কেরল সরকার নিজের কোষাগার থেকে মোদী সরকারের বেচে দেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনেছে।” তাঁর দাবি, কেরল দেশের একমাত্র রাজ্য যেখানে কোনও সাম্প্রদায়িক হানাহানি ঘটেনি। মানব উন্নয়ন সূচকে কেরল দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা রাজ্য ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করে বিজয়ন বলেন, “আবাস, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলায় দুর্নীতি হয়েছে। টাকা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের পকেটে।”
বিজয়ন তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। মোদী সরকার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে দিতে চাইছে বলে বিজয়নের অভিযোগ, “এক দেশ, এক পোশাক, এক দেশ, এক নির্বাচন, এক দেশ, এক ভাষা আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। যাঁরা গান্ধীজিকে খুন করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে দেশভক্তি শিখতে হবে?” নাম না করে আদানি নিয়েও কেন্দ্রকে বিঁধে বিজয়ন বলেন, “ওঁরা যতই ধর্মীয় মেরুকরণের আড়ালে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করুন। আজ সবার সামনে তা চলে আসছে।” বিজেপি নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলেও তিনি জানান।
যদিও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “কেরল যদি উন্নয়নের মডেল হবে তা হলে কেন্দ্রের প্রথম পুরস্কারগুলি কেরল না পেয়ে বাংলা পায় কী ভাবে? উনি বলুন ওঁর রাজ্যে তো উনি কংগ্রেসকে শত্রু মনে করেন। এখানে আবার তারাই জোটসঙ্গী।” রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “প্রায় তৃণমূলী কায়দায় কমিউনিস্টরা যখন মোদী সরকারকে আক্রমণ করছে, তার অর্থ আমরা সঠিক পথে চলেছি।”
বক্তব্য রাখতে সেলিম তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “আমরা স্লোগান দিয়েছি গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও।” মানুষ জেগে গেলে চোরদের গাছে বেঁধে পেটাবে বলেও তিনি ইঙ্গিত করেন। তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরও জোরদার লড়াইয়ের ডাক দেন।