‘ধরাছোঁয়ার বাইরে নেতারা’
Pinarayi Vijayan

Pinarayi Vijayan: বিজয়ন, মন্ত্রীদের হাবভাবে ঝড় দলীয় সম্মেলনে

টানা দু’বার বা তার বেশি সময় যাঁরা বিধায়ক ছিলেন, তাঁদের এ বার বিধানসভা ভোটে টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৭
Share:

পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র।

কয়েক মাস আগেই নজির গড়ে রাজ্যে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে বাম সরকার। পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় দফার সেই সরকার ও মন্ত্রিসভাই কড়া সমালোচনার মুখে পড়ল শাসক সিপিএমের সম্মেলনে! দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য ‘ত্রুটি-খামতি’ সংশোধন করে নেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের কাছে আরও সময় চেয়েছেন।

Advertisement

কেরলের রাজধানী শহরকে কেন্দ্র করে যে তিরুঅনন্তপুরম জেলা, সেখানে গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে ১৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৩টিতেই জয়ী হয়েছে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট এলডিএফ। দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিজেপির দখলে যে একটি মাত্র আসন ছিল, তা-ও সিপিএম পুনর্দখল করেছে এই জেলাতেই। স্থানীয় প্রশাসনের ভোটে তিরুঅনন্তপুরম পুর-নিগমও বামেদের ঘরে এসেছে। এমন নির্বাচনী সাফল্যের পরে সিপিএমের তিরুঅনন্তপুরম জেলা সম্মেলনে অবশ্য শোনা গিয়েছে সমালোচনার সুর। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে বেশ কিছু দফতরের মন্ত্রীরা দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গেও ঠিক ব্যবহার করছেন না, সরকারি কাজে অনেক গোলমাল দেখা যাচ্ছে বলে সরব হয়েছেন সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বড় অংশ। সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলনের অভ্যন্তরে দলের মন্ত্রিসভা ও সরকারকে কাঠগড়ায় তোলার ক্ষেত্রে সব চেয়ে চড়া সুর ছিল সিপিএম বিধায়ক ভি কে প্রশান্তের।

টানা দু’বার বা তার বেশি সময় যাঁরা বিধায়ক ছিলেন, তাঁদের এ বার বিধানসভা ভোটে টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। ভোটে সাফল্য পেলেও এই নীতির ফলে রাজ্যে মন্ত্রিসভা হয়েছে একেবারে আনকোরা। করোনা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও মন্ত্রিসভায় আর ফেরা হয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে বাদ দিলে মন্ত্রিসভায় গুচ্ছ গুচ্ছ নতুন মুখ। তিরুঅনন্তপুরমের সম্মেলনে এই নতুন মন্ত্রীদের অনেককে নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দলের প্রতিনিধিরা। বিশেষত, তাঁদের নিশানায় ছিল শিল্প, স্বাস্থ্য, স্থানীয় প্রশাসন এবং শরিক সিপিআইয়ের হাতে থাকা কয়েকটি দফতর। পুলিশের ভূমিকাও যে বহু ক্ষেত্রে বিতর্কিত হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই অভিযোগও করেছেন প্রতিনিধিরা। সিপিএম সূত্রের খবর, বিধায়ক প্রশান্তের মতো অনেকেরই বক্তব্য, নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই টানা দু’বার জয়ের নজির গড়া গিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীদের কেউ কেউ এখনই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছেন! মানুষের সঙ্গে ঠিকমতো মেলামেশা করছেন না, দলের কর্মী-সমর্থকেরাও প্রয়োজনে তাঁদের নাগাল পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও সমালোচনার বাইরে যায়নি।

Advertisement

দক্ষিণে তিরুঅনন্তপুরম থেকে উত্তরে কাসারগোড় পর্যন্ত দ্রুতগামী কে-রেল প্রকল্প ঘিরে এখন বিতর্ক চলছে কেরলে। বিরোধী কংগ্রেসের পাশাপাশি বামপন্থী ও নাগরিক সংগঠনগুলির একাংশও ওই প্রকল্পের বিরোধিতায় নেমেছে। এমন প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতার প্রচার ও তথ্য দেওয়ায় সরকারের তরফে ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা সম্মেলনেও।

তিরুঅনন্তপুরমে তিন দিনের এই সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। প্রতিনিধিদের সমালোচনার তির সম্মেলনে হাজির থেকে শুনেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ই পি জয়রাজন, এম ভি গোবিন্দন মাস্টার, পি কে শ্রীমতি, এ কে বালনেরা। কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় শৈলজা অবশ্য সম্মেলনে ছিলেন না। শেষ দিনে, রবিবার দলের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন সম্মেলনে বলেন, বিজয়নের প্রথম সরকারের সঙ্গে ৯ মাসেই দ্বিতীয় সরকারের তুলনা করা ঠিক নয়। অনেকেই নতুন এসেছেন, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। সরকার পরিচালনায় ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে নেওয়া হবে, তার জন্য সময় দেওয়ার কথা বলেন বালকৃষ্ণন। পাশাপাশিই তাঁর মন্তব্য, পুলিশের কাজ নিয়ে ক্ষোভ ‘সব সময়েই’ ছিল! তিরুঅনন্তপুরমের জেলা সম্পাদক পদে ফের দায়িত্ব পেয়েছেন আনাভুর নাগপ্পন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement