ছবি: পিটিআই।
কেরলের কোঝিকোড় বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর সর্বময় কর্তা ডিরেক্টর অরুণ কুমার নিজে পাইলটদের উপরে দোষারোপের আঙুল তুলেছেন, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এয়ার ইন্ডিয়ার দুই পাইলট সংগঠন। দেশের বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে আইএএস অরুণ কুমারকে সরিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিজিসিএ-র ডিরেক্টর পদে এ বার থেকে বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত, অভিজ্ঞ কোনও ব্যক্তিকে বসানো উচিত।
দিন দুই আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অরুণ কুমার বলেন, “মনে হচ্ছে বিমানের ল্যান্ডিং ঠিক হয়নি। ল্যান্ডিং মসৃণও ছিল না।” পাইলটদের অভিযোগ, ওই সাক্ষাৎকারে অরুণ মৃত দুই পাইলটকে ‘ফেলো’ বলে সম্বোধন করেন। পাইলটদের দাবি, সম্বোধনে আরও সম্মান দেখানো উচিত ছিল। বাঙলায় ফেলো কথার আভিধানিক অর্থ, সহকর্মী।
ইন্ডিয়ান কর্মাশিয়াল পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (আইসিপিএ) এবং ইন্ডিয়ান পাইলট গিল্ড (আইপিজি)-এর বক্তব্য, তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। এখনও ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) ডি-কোড করা হয়নি। তার আগেই কী করে অরুণ কুমার বলে দিলেন যে ল্যান্ডিং-এর সমস্যার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে? চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পরে তদন্তের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, যাতে আবার একই রকম দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটা দেখা। কাউকে দোষারোপ করা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
ডিজিসিএ এ দেশের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সবাইকে নিয়ম শেখায় ডিজিসিএ। নিয়ম না মানলে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সেই ডিজিসিএ-র কর্তা কোন নিয়মে তদন্ত শেষের আগেই দুর্ঘটনার কারণ বলে দিচ্ছেন, প্রশ্ন পাইলটদের। অরুণ কুমারের বলা ‘মসৃণ ল্যান্ডিং’-এর প্রসঙ্গ তুলে পাইলটদের অভিযোগ, বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত যান্ত্রিক বিষয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই তাঁর। প্রতিকূল আবহাওয়ায় মসৃণ ল্যান্ডিং অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেটা পাইলটেরা ভাল জানেন।
অভিযোগ, বিমানবন্দরের পরিকাঠামোর অভাব, নিয়মের অভাব-সহ অন্যান্য গাফিলতি ঢাকতে চিরকালই এই ধরনের দুর্ঘটনার পরে পাইলটদের দিকে আঙুল তোলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাইলট আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আর বেঁচে থাকেন না। অভিযোগ, উড়ান সংস্থাগুলির স্বার্থ রক্ষার জন্য পাইলটদের ডিউটির সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাইলটদের পক্ষ থেকে সেই সময়সীমা কমানোর জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু ডিজিসিএ-র সে দিকে নজর নেই।
আমেরিকার বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)-র উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের বিগত যে ১৯ জন কর্তা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৪ জনই অভিজ্ঞ সিনিয়র পাইলট। বাকিরাও বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত। ডিজিসিএ-র সর্বোচ্চ পদেও এমন একজনকে বসানো হোক বলে তাঁদের দাবি। বুধবার অরুণ কুমারকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।