মানিক সরকার। নিজস্ব চিত্র।
কই গো! খবর শুনেছো? ধবধবে পাঞ্জাবির হাতা গুটোতে গুটোতে ঝড়ের মতো ঢুকলেন তিনি।
কয়েকটা আসনের প্রার্থী, তাঁদের এজেন্ট এবং বাছাই করা কিছু স্থানীয় নেতাকে নিয়ে জরুরি বৈঠক। আলোচনা শুরুর আগে দলীয় সহকর্মীদের প্রশ্নকর্তাই জানিয়ে দিলেন, আগরতলায় রটেছে আমার নাকি স্ট্রোক হয়েছে! কই আমি তো কিছু জানি না! বাকিদের হাসির রোল থামার আগেই বন্ধ হয়ে গেল ঘরের দরজা।
অন্য ঘরে সিপিএমের সোনামুড়া মহকুমা কমিটির অফিস সম্পাদক তুষার মজুমদার বলছিলেন, ‘‘একটা ভোট নিয়ে কী চলছে ভাবুন! মুখ্যমন্ত্রীর স্ট্রোকের গুজব রটিয়ে দেওয়া হল এ বার!’’ তাঁরা কি চিন্তায়? বিধায়ক এবং নলছড়ের সিপিএম প্রার্থী তপন দাস উত্তরটা দিয়ে দিলেন, ‘‘চিন্তার কিছু নেই। ভোটের হইচই শুরুর আগে মফস্সল এবং গ্রামে গ্রামে আমরা ছোট ছোট বৈঠক করে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আবার সভা করে তাঁদের কাছে যাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: মেঘালয়ে ধনকুবের প্রার্থীর মোট সম্পত্তি ২৯০ কোটির
ঘর গুছোনোর কাজ যত আগেই শুরু হয়ে থাক, সাদা পাঞ্জাবির ভদ্রলোক কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজ্যের এ’মুড়ো থেকে ও’মুড়ো দৌড়চ্ছেন। এবং জনতাকে হুঁশিয়ার করছেন, ‘‘সাবধান থাকুন! দিনে জাগুন, রাতেও জাগুন। বাজপাখি উড়ছে! ওরা আবার রাজ্যভাগের কথা তুলবে। ওরা বলছে, চলো পাল্টাই। শান্তি পাল্টে অশান্তি আনবেন? সম্প্রীতি পাল্টে বিভাজন আনবেন?’’ বিজেপি এবং আইপিএফটি-র জোট কোনও ভাবে ক্ষমতা পেয়ে গেলে যে সাড়ে সর্বনাশ, এই বিপদের কথা আগে বলে নিয়ে তার পরে জুড়ছেন, ‘‘সব কাজ করে দিয়েছি, সব সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি, এমন দাবি কখনও করব না। কিন্তু এমন কিছু করিনি, যাতে আপনাদের অসুবিধা বেড়ে যায়!’’
বামডাক: ত্রিপুরায় কড়ইমুড়ার মানিক সরকারের জনসভা। মঙ্গলবার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
দেশের মধ্যে কঁহা কঁহা মুলুক থেকে সংবাদমাধ্যম ভিড় করেছে এই ছোট্ট রাজ্যে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উদ্যত আক্রমণের সামনে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে সবাই কথা বলতে চায়। গোটা দেশের নজরই তো এখন এই ত্রিপুরার ভোটে! হা-ক্লান্ত শরীরে পাঞ্জাবির বোতামের ফাঁকে টিভি চ্যানেলের ল্যাপ্ল আটকে নিয়ে দু’-তিনটে করে কথা বলছেন তিনি।
সারা দেশ জেনে গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ত্রিপুরায় ‘মানিক ফেলে হিরা’ নিতে বলেছেন। তিনি কী বলছেন? প্রশ্ন শুনে মুখে হাসি মেখে শান্ত গলায় তিনি বললেন, ‘‘নির্বাচন একটা রাজনৈতিক লড়াই। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত স্তরে নেমে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদটার সম্মান আছে। ত্রিপুরার মানুষ শুনেছেন, জবাবটা না হয় ওঁরাই দেবেন!’’
মানুষ যাতে জবাব দেওয়ার জন্য বুথে পৌঁছন, তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সোনামুড়ার ওই অফিসে সাংগঠনিক আলোচনা চলছিল। পরে আবার জনসভা আছে। দীর্ঘ অপেক্ষা করে শেষমেশ নিরাপত্তা অফিসার ভিতরে ঢুকে মনে করালেন খাওয়ার কথা। ঘড়িতে চোখ রেখেই ঝটিতি উঠে দাঁড়ালেন সাদা পাঞ্জাবি। খাওয়া হবে না এখন। চলি গো! ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলেন মানিক সরকার!