কাদামাঠে: চলছে পোলো খেলা। —নিজস্ব চিত্র।
সেটা ইংরেজ আমলের কথা। শিলচরে পোলো ক্লাব তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। এক সময় এ শহরে পোলোর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
এখন সব অতীত। কোনও পোলো ক্লাবের অস্তিত্ব আর নেই অসমের বরাক উপত্যকার এই শহরে। নেই খেলোয়াড়ও। এমনকী শিলচরে এমন মানুষের সংখ্যাও কম, যাঁরা ঘোড়ার পিঠে চেপে বল খেলা দেখেছেন নিজের চোখে।
‘নমামি বরাক’ উৎসবে পুরনো সেই অতীতকেই ফিরিয়ে আনলেন উদ্যোক্তারা। শিলচরে ফের বসল পোলো খেলার আসর। ভিড় জমে যায় মাঠের চার ধারে। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। খেলোয়াড়, ঘোড়া, রেফারি নিয়ে এসেছিল মণিপুর পোলো ক্লাব। তাঁরাই ‘বরাক’ ও ‘সাঙ্গাই’ নামে দুটো দলে ভাগ হয়ে ‘লড়াই’ করে। নিজেদের খেলোয়াড় না থাকলেও ‘বরাক’ নামের দল খেলায় সারাক্ষণ আধিপত্য দেখানোয় দর্শকরা উপভোগ করেন। ৬-৪ গোলে জেতে ‘বরাক’-ই। তবে মাঠে কাদা থাকায় খেলোয়াড়দের সমস্যা হয়। গতি হারাচ্ছিল ম্যাচ। খেলোয়াড়রা তাতে অসন্তোষ জানান। একে তো মাঠ ছোট। তার উপর কাদা। ঘোড়া ছুটতে পারছিল না, বলও উঠছিল না। দর্শকদের অনেকে মাঠে দাঁড়াতে না পেরে ফিরে যান।
‘নমামি বরাক’ উৎসবের নোডাল অফিসার আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারির কথায়, ‘‘বৃষ্টি না হলে সমস্যা হতো না।’’ মণিপুর পোলো ক্লাবের সভাপতি শরৎচন্দ্র সিংহ জানান, আধুনিক পোলো খেলা শিলচর থেকে ছড়ালেও তার সূচনা কিন্তু মণিপুরেই। ‘সাগল কাংজা’ নামে তাদের পরম্পরাগত খেলা থেকে আধুনিক পোলোর জন্ম। ‘সাগল’ অর্থাৎ ঘোড়া, ‘কাংজা’ মানে হকি। ৭ জনের দল ঘোড়ার পিঠে হকি খেলতেন। ব্রিটিশ চা উৎপাদকরা এক বার ইম্ফলে গিয়ে খেলা দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শিলচরে ফিরে ৭ জনের বদলে ৪ জনের দল গড়ে খেলতে শুরু করেন তাঁরা। তৈরি করেন পোলো রিট্রিট ক্লাব। সেটা ১৮৫৯ সাল। পরে মণিপুর রাজার দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেরা প্রতিযোগিতায় নামেন। সেই প্রথম ৪ জনের দল ঘোড়ায় হকি খেলে। ‘সাগল কাংজা’ বদলায় পোলোয়।