কাজের খোঁজে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের ভিন রাজ্যে যাওয়া নতুন ব্যাপার নয়। এ বার টাকা তুলতেও পড়শি রাজ্যে ছুটছেন এ রাজ্যের বাসিন্দাদের অনেকেই। নোট বাতিলের পর থেকেই কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা অসমের ধুবুরি জেলার বিভিন্ন এটিএমে ভিড় জমাচ্ছেন। অসম লাগোয়া কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ওই প্রবণতা বেশি। ধুবুরির ছাগলিয়া এলাকার একটি রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে প্রায় প্রতিদিনই এমন বাসিন্দাদের ভিড় হচ্ছে। নোট বাতিলের একমাস পরেও টাকা তুলতে ভিন রাজ্য যাত্রার ছবি এতটুকু বদলায়নি। গ্রাহকদের অভিযোগ, একে এতদিনেও কোচবিহারের বেশিরভাগ এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। তার ওপর কোথাও দীর্ঘ লাইন পড়ছে। কোথাও আবার লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা মিলবে কি না তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই। তুলনামূলকভাবে অসমে ওই সমস্যা কম। তাছাড়া কোচবিহারের কিছু এলাকা থেকে জেলা শহরের তুলনায় অসমের কিছু এটিএমের দূরত্ব অর্ধেকের কম।
তুফানগঞ্জ মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, “ব্যবসা শিকেয় ওঠার উপক্রম। বাধ্য হয়েই অনেকে অসমের এটিএমে টাকা তুলছেন।” তুফানগঞ্জের বাসিন্দা সুপ্রিয় দত্ত, বক্সিরহাটের সুরেশ বর্মনদের মত স্কুলশিক্ষকদের অনেকেই টাকা তুলেছেন। সুপ্রিয়বাবু বলেন, “ছাগলিয়ার এটিএমে নভেম্বরের শেষে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। ডিসেম্বরে ২ হাজার টাকা পেয়েছি।” বক্সিরহাটের বাসিন্দা সুরেশ বর্মন বলেন, “আমিও অসমের এটিএমে টাকা তুলেছি। ভিড় অনেকটা কম।” জেলার ব্যাঙ্ক কর্তাদের অনেকেও ওই বিষয়টি জেনেছেন। কোচবিহারের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার বলেন, “অনেকে অসম যাচ্ছেন বলে শুনেছি। তবে কোচবিহারের বেশ কিছু এটিএম ইতিমধ্যে খোলা হয়েছে।”
কোচবিহারে ব্যাঙ্ক কর্তাদের একাংশের ধারণা, অসমে তুলনামূলক বাড়তি বরাদ্দ মিলছে। এটিএম কার্ডের উপভোক্তাদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। সব মিলিয়ে ওই সমস্যা অনেকটা কম। ধুবুরি ডিস্ট্রিক্ট ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা শিশির সাহা বলেন, “শুরুতে সমস্যা হলেও এখন পরিষেবা প্রায় স্বাভাবিক।”
গোটা ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তে মানুষ হয়রান হচ্ছেন। ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত। টাকার বরাদ্দ নিয়েও ওরা পক্ষপাত করছেন।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। জেলায় তৃণমূল প্রভাবিত ব্যাঙ্ক কর্মীদের উদাসীনতার জন্যই সমস্যা হচ্ছে।”