অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার।
অনেকটা ‘পিসি’র মেজাজেই আজ যন্তর মন্তর থেকে কৃষি ভবন পর্যন্ত ঝড় তুললেন ‘ভাইপো’। যন্তর মন্তরে মঞ্চ থেকে ‘ভাইপো’ অর্থাৎ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সরাসরি হুমকি দিলেন নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। বললেন, “বাংলা থেকে আসা এক জন জব কার্ডধারীর গায়ে হাত তো ছেড়ে দিন, যদি একটা আঁচড়ও পড়ে, তা হলে মনে রাখবেন কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রতিনিধিকে, বিজেপি-র বহু নেতা-কর্মীকে কিন্তু বাংলায় থাকতে হয়! বিজেপি যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই উত্তর দেব।”
বাংলা থেকে আসা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সামলাতে আজ যন্তর মন্তর চত্বর থেকে কৃষি ভবন পর্যন্ত এলাকাকে কার্যত দুর্গে পরিণত করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ। রাজঘাটে গত কাল তৃণমূলের এই ভিড় যে ভাবে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছিল, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য প্রায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তার মধ্যেই যন্তর মন্তরে উপচে পড়া ভিড়ে। তার বাইরের রাস্তার প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে শুধুই বাংলা থেকে আসা তৃণমূলের নেতা-কর্মী এবং ১০০ দিনের কাজে টাকা না-পাওয়ায় অভিযোগকারীদের ভিড়। বাংলার শাসকদলের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে আসার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে যন্তর মন্তর থেকে কৃষি ভবনে যাওয়ায় রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। যাতে যন্তর মন্তরের তৃণমূলের জমায়েত কৃষি ভবনে চলে আসতে না পারে।
বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ বক্তৃতা দেন অভিষেক। ‘পিসি’ তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢংয়েই জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্লোগান তোলেন তিনি। তাঁর ‘জমিদার হঠাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে গলা মেলায় গোটা যন্তর মন্তর। দিল্লি পুলিশ তখন দৃশ্যত ‘সন্ত্রস্ত্র’। তিনি স্লোগান দিতে থাকেন, ‘দড়ি ধরে মারো টান’, জনতার যার পাদপূরণ করতে থাকে ‘রাজা হবে খান খান’। অভিষেকের হুঁশিয়ারি, “অনেক চেষ্টা করেছিল মোদী সরকার, কিন্তু আজকের এই জনসভাকে তো আটকাতে পারল না। আগামী দু’মাসের মধ্যে বাংলা থেকে দু’লক্ষ মানুষকে এনে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আবার সভা করব। আজ আন্দোলন শেষ হল না বরং শুরু হল।”
বক্তৃতার শেষে অভিষেক দলীয় কর্ম-সমর্থকদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন নির্ধারিত বাসে অম্বেডকর ভবনে তাঁদের অস্থায়ী আস্তানায় ফিরে যান। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বারবার অনুরোধ করেন, তাঁরা (কর্মী-সমর্থক) যেন কৃষি ভবনের দিকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে না যান। অভিষেকের কথায়, “এই সরকারকে ভরসা করি না। আপনারা মিছিলের সঙ্গে হাঁটবেন না।’’ যন্তর মন্তরে সমবেত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের অভিষেকের প্রশ্ন, “বিজেপির অনেকেই বলছেন আমরা নাকি টাকা দিয়ে বাংলা থেকে আপনাদের এনেছি। আপনারাই বলুন, আমরা কি টাকা দিয়ে আপনাদের এনেছি,?” সমস্বরে উত্তর, “না।’’ অভিষেকের কথায়, “তৃণমূল মানুষকে আনেনি। মানুষই এখানে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে তৃণমূলকে নিয়ে এসেছেন।”