একবারে ২০ হাজার টাকার বেশি বদল করা যাবে না। প্রতীকী চিত্র।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের পরেও ২০০০ টাকার নোট বৈধ থাকবে বলে রবিবার রাতে স্পষ্ট জানিয়ে দিল মোদী সরকার। তবে বাজার থেকে তা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে ওই সময়ের মধ্যে তা বদলে নিতে হবে বলেই ইঙ্গিত তাদের। কেন্দ্রীয় তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রক ওই নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে একগুচ্ছ টুইটে এ কথাও বলেছে, বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা বা দৌড়োদৌড়ি করার দরকার নেই। যে কোনও ব্যাঙ্কে (অ্যাকাউন্ট না থাকলেও) নিখরচায় তা বদলানো যাবে। এ দিনই সরকারের এক আধিকারিক জানান, ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ২০০০ টাকার নোট বদলে নিতে কোনও ফর্ম (রিকুইজ়িশন স্লিপ) পূরণ করতে হবে না। লাগবে না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় সংক্রান্ত কোনও নথিও। গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কথাই জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় দফতর। তবে বলা হয়েছে, একলপ্তে ১০টির বেশি নোট, অর্থাৎ ২০,০০০ টাকার বেশি কেউ ভাঙাতে পারবেন না।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, পরিচয় জানার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যাঙ্ক কী করে বুঝবে এক জন ব্যক্তি এক বারই নোট বদলাচ্ছেন। যার উত্তরে ওই সরকারি আধিকারিক জানান, একলপ্তে ২০,০০০ টাকার বেশি বদলানো যাবে না ঠিকই। তবে এক দিনে যত বার ইচ্ছে সেই লাইনে দাঁড়িয়ে নোট ভাঙিয়ে নেওয়া যাবে। কেউ কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবে না। যার মানে দাঁড়ায়, যে কেউ এক দিনে একাধিক বার ২০,০০০ টাকা করে ২০০০-এর নোট জমা দিতে পারবেন। তাতে কোনও নজরদারি থাকবে না।
এর পরেই উঠেছে প্রশ্ন, এ ভাবে তো কালো টাকাও কোনও বাধা ছাড়া অতি সহজে ভাঙিয়ে নিতে পারবে একাংশ! সংশ্লিষ্ট মহলের কটাক্ষ, এই সিদ্ধান্তের আসল উদ্দেশ্য কি এটাই? রাতের টুইটে কেন্দ্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, এটা নোট বাতিল নয়। ২০০০ টাকা ছোট অঙ্কের নোটে ভাঙানোর ব্যবস্থা করে লেনদেন আরও সহজ করা এবং প্রয়োজন মেটানোর সুবিধা দেওয়া হল। এটি ছাপা বন্ধ হয়েছিল ২০১৮-’১৯ সালে। এ বার শুধু প্রত্যাহার করা হল। তারা বলেছে, ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের সময় নগদ বাড়াতে তা বাজারে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ২০০০ ব্যবহার করেন। তার উপরে ইউপিআই এবং ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা মেটানো বিপুল বেড়ে গিয়েছে।
আগামী কাল, ২৩ মে থেকে নোট বদল শুরু হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে অবশ্য তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সংবাদমাধ্যমের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রাক্তন প্রধান সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০০ টাকার নোট বাজারে আনার বিপক্ষে ছিলেন। উনি বলেছিলেন, এটা লেনদেনের জন্য ঠিক নয়। কালো টাকা এবং কর ফাঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এই টুইটকে বিঁধে এ দিন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন প্রধান সহযোগী বলেছেন স্বঘোষিত বিশ্বগুরু ২০১৬-র নভেম্বরে ২০০০-এর নোট চালুর বিরোধিতা করেছিলেন। এর পরে তিনি বলবেন, ‘মিত্র’ বলে ঘোষণা করেছিলেন যিনি, পরামর্শদাতাদের কথাতেই তিনি নোট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এটা ভুল ঢাকার করুণ চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’’
গত শনিবার স্টেট ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় দফতর তাদের সমস্ত স্থানীয় সদর দফতরের চিফ জেনারেল ম্যানেজারদের উদ্দেশে নোট বদল সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বলেছে, ২০০০ টাকার নোট ভাঙানোর ব্যাপারে পূর্বের অনলাইন বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন করা হয়েছে। সেই চিঠির শুরুতে ২০০০ নোট বৈধ থাকবে বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি এসবিআই কর্তৃপক্ষের বার্তা, সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয় এবং গোটা প্রক্রিয়াটা যাতে মসৃণ ভাবে চলতে পারে তাই নোট বদলাতে কোনও ফর্ম বা বদলাতে আসা ব্যক্তির পরিচয়ের প্রমাণ লাগবে না। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, নোট বদলের ক্ষেত্রে আগে ফর্ম পূরণ এবং পরিচয়ের নথি জমার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই স্টেট ব্যাঙ্ক শর্ত তুলে নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। পরে বাকি ব্যাঙ্কগুলিও দেবে।
ব্যাঙ্ক অফিসারদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, “পরিচয়ের প্রমাণ ছাড়া ইচ্ছেমতো নোট বদলের সুবিধা সাধারণ মানুষের হয়রানি কমাবে। তবে সাধারণ রোজগেরে মানুষের হাতে ক’টাই বা এমন বড় নোট থাকে! আমাদের আশঙ্কা, এই ব্যবস্থা কালো টাকা সাদা করার পথ খুলে দিল। অথচ পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বাতিল করার কারণ হিসেবে অতীতে কিন্তু কালো টাকা উদ্ধারের যুক্তিই দেওয়া হয়েছিল।’’ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নিজের অ্যাকাউন্টে নোট জমার ক্ষেত্রেও কেওয়াইসি-সহ চালু নিয়ম ছাড়া আর কোনও বাধানিষেধ নেই। বাঁধা হয়নি কোনও ঊর্ধ্বসীমাও।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন একে নোটবন্দির মতোই ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৬-র নোট বাতিলের মতো এ বার ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখতে এই সমস্ত কিছু করছে। অন্য দিকে, হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ ঠাট্টা করে বলেছেন, যাঁরা বেআইনি ভাবে বড় নোট মজুত করেছিল, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তে তাঁরা কান্নাকাটি করছে। ব্যাঙ্কিং মহলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বিশেষজ্ঞের অবশ্য দাবি, যে প্রক্রিয়ায় নোট বদলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে কালো টাকার মালিকেরা খুশিই হবেন।