(বাঁ দিক থেকে) অমিত শাহ এবং পেমা খান্ডু। ছবি: এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া।
অরুণাচল প্রদেশে অটুট রইল বিজেপির ‘জুটি’। বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন পেমা খান্ডু। তাঁর সঙ্গেই আবার উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছে চওনা মেইন। বিদায়ী মন্ত্রিসভাতেও তিনি পেমার ডেপুটি ছিলেন। পেমা এবং মেইনের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল কেটি পরনায়েকের কাছে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির আরও ১০ জন বিধায়ক। শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ দলের সর্বভারতীয় নেতারা।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের সঙ্গেই এ বার ৬০ সদস্যের অরুণাচল বিধানসভা ভোট হয়েছিল। নির্বাচনের আগেই পেমা-সহ বিধানসভার ১০ জন বিজেপি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিলেন। যে ৫০টি আসনে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে ৩৬টিতেই জিতে ৪৬-এ পৌঁছে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী পেমার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বিজেপি। পাঁচটিতে মেঘালয়ের শাসকদল এনপিপি। বাকি তিনটিতে অজিত পওয়ারের এনসিপি, দু’টিতে পিপল্স পার্টি অফ অরুণাচল (পিপিএ), একটিতে কংগ্রেস এবং তিনটি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।
২০১৪-র বিধানসভা ভোটে জিতে অরুণাচলে কংগ্রেস সরকার গঠন করলেও পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী পেমা অধিকাংশ বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৯-এর ভোটে সেখানে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল পদ্মশিবির। এ বার কংগ্রেস, এনপিপির মতো বিরোধী দলগুলি থাকলেও সেখানে বিজেপির ক্ষমতা পুনর্দখল কার্যত নিশ্চিত বলেই বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত ছিল। কার্যক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
গত দেড় দশকে ইটানগরে বহু বার রাজনৈতিক টানাপড়েন হয়েছে। ২০১১ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পেমার পিতা তথা তৎকালীন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী দোরজি খান্ডুর মৃত্যু হয়। এর পরে অশান্তি শুরু হয় কংগ্রেসের অন্দরে। প্রথমে জারবম গ্যামলিন মুখ্যমন্ত্রী হন। কংগ্রেসে শুরু হয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের সমর্থনে ক্ষমতা দখল করেন নাবাম টুকি। ২০১৪ সালের ভোটে কংগ্রেস ৪২ আসনে জিতলে টুকি ফের মুখ্যমন্ত্রী হন।
কিন্তু কালিখো পুলের নেতৃত্বে পেমা-সহ বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কেরা তাঁকে সরিয়ে বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়েন। মামলা আদালতে গড়ায়। রাষ্ট্রপতি শাসনে টুকি ক্ষমতা ফিরে পেলেও কংগ্রেস নেতৃত্ব পেমার এবং তাঁর অনুগামীদের দাবি মেনে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করেন। ২০১৬ সালে পেমার নেতৃত্বে অধিকাংশ বিধায়ক দলবদল করে পিপিএতে যোগ দেন। আঞ্চলিক দল পিপিএ সরকার গড়ে। পরে তাঁরা ফের দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন।
এর পর ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি অরুণাচলে ক্ষমতা দখল করে। এ বারও বজায় থেকেছে সেই জয়ের ধারা। গত কয়েক দশক ধরেই দেখা গিয়েছে, দিল্লিতে যার সরকার, অরুণাচল সেই দলের দিকেই ঝোঁকে। তাদের ধারণা, কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগোলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়া সহজ হয়। দলবদলের যুক্তি হিসেবে আট বছর আগে সেই যুক্তিকেই প্রকাশ্যে এনেছিলেন পেমা।