প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার পর থেকেই ‘আত্মনির্ভর’ শব্দবন্ধটি চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ও বিভিন্ন আড্ডায় সেই প্রসঙ্গে মত বিনিময়ও হয়েছে প্রচুর।
আত্মনির্ভরতার চর্চা দেশে নতুন কিছু নয়। দেশের অনেক জায়গাতেই এর চর্চা রয়েছে। এই আত্মনির্ভরতার প্রকৃত নিদর্শন বহন করে চলেছে মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের এক গ্রাম।
মধ্যপ্রদেশে ছান্দিওয়াড়া জেলায় রয়েছে সতপুড়া পার্বত্য অঞ্চল। সতপুড়া পার্বত্য এলাকায় রয়েছে পাতালকোট গ্রাম। ছান্দিওয়াড়ার সদর শহর থেকে যা প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে।
সেই এলাকার গ্রামগুলিতে মূলত ভারিয়া ভূমিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। পাহাড়ি জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র।
দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় ওই আদিবাসীরা থাকলেও, তাদের সম্বন্ধে খুব একটা কিছু জানা যেত না। এমনকি কয়েক বছর আগে ম্যাপেই ছিল না এই এলাকার অস্তিত্ব।
পাহাড়ের উঁচু এলাকা থেকে বোঝা যায় ওই পাতালকোট উপত্যকার গ্রামগুলি। সমতল থেকে প্রায় ১৭ ফুট নীচে অবস্থিত ওই গ্রামগুলি।
এই এলাকাকে ‘পাতালে পৌঁছনোর সিঁড়ি’ বলেও মনে করেন স্থানীয়দের অনেকে। আদিবাসীদের বিশ্বাস, সীতা এই এলাকা দিয়েই পাতালে প্রবেশ করেছিলেন।
পাতালকোট এলাকায় রয়েছে আদিবাসীদের ১২-১৩টি গ্রাম। সেই গ্রামগুলির জীবনযাত্রায় আত্মনির্ভরতার ছাপ স্পষ্ট।
এই এলাকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন খাওয়ার জিনিস নিজেরাই জোগাড় করেন। সেই জিনিসের জন্য বাজারের উপর নির্ভর করতে হয় না তাঁদের।
পাতালকোট এলাকায় খাদ্যশস্য ও শাক সবজি তাঁরা নিজেরাই চাষ করেন।
পাতালকোটের জঙ্গল এলাকা থেকেও বিভিন্ন ফল, মধু সংগ্রহ করেন তাঁরা।
আদিবাসীদের ওষুধের প্রয়োজনও মিটিয়ে দেয় এই জঙ্গলই। জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ঔষধি গাছ। সেই গাছ থেকেই তারা তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।
এই কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট লোক রয়েছেন ওই আদিবাসী গ্রামে। তারাই বংশ পরম্পরায় করে আসছেন ওষুধ তৈরির সেই কাজ।
তাই জীবন ধারণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনী খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে পুরোপুরি স্বনির্ভর এই জনজাতি।
কিন্তু একটি জিনিস তাদের বাইরে থেকেই জোগাড় করে আনতে হয়। তা হল লবণ। রান্নার এই অবিচ্ছেদ্য উপাদান ছাড়া সব ব্যাপারেই স্বনির্ভর পাতালকোট এলাকার ওই গ্রামগুলি।