ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। ছবি: পিটিআই।
নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলকে জিতিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন। সেই ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-এর তৈরি নতুন দল জন সুরাজ প্রথম বার বিহারের উপনির্বাচনে চার বিধানসভা আসনে লড়াই করে হেরেছে চারটিতেই। বিহারের ইমামগঞ্জে জিতেন্দ্র পাসোয়ান, বেলাগঞ্জে মহম্মদ আমজাদ, রামগড়ে সুশীলকুমার সিংহ, তারারিতে কিরণ সিংহকে প্রার্থী করেছিল জন সুরাজ। চার জনেরই জামানত জব্দ হয়েছে। তবে কি খাটল না ভোটকুশলীর কৌশল?
গত ২ অক্টোবর পিকের জন সুরাজ দল আত্মপ্রকাশ করে বিহারের পটনায়। ওই দিনই তিনি দাবি করেছিলেন, জন সুরাজ ভোট রাজনীতির ময়দানে নামলে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) ২০টির বেশি আসন পাবে না। কেন তিনি আত্মবিশ্বাসী, তার যুক্তিও দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, কেউ অন্যকে জেতাতে পারলে নিজে কেন জিততে পারবে না! যদিও উপনির্বাচনের ফলঘোষণার পর দেখা গিয়েছে, চারটি বিধানসভা আসনে বিপুল ভোটে হেরেছে পিকের দল। কোনও আসনে দ্বিতীয় স্থানেও আসতে পারেননি প্রার্থীরা। যে নীতীশের দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন তিনি, সেই জেডিইউ চারটির মধ্যে একটিতে জয়ী হয়েছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ২০২৫ সালে বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনকে ‘প্রিটেস্ট’ হিসাবে ধরা হলে তাতে ভরাডুবি হয়েছে জন সুরাজের।
বেলাগঞ্জে মহম্মদ আজাদ পেয়েছেন ১৭,২৮৫ ভোট। সেখানে জয়ী জেডিইউ প্রার্থী মনোরমা দেবী পেয়েছেন ৭৩,৩৩৪ ভোট। ইমামগঞ্জে জিতেন্দ্রকে প্রার্থী করেছিলেন প্রশান্ত। তিনি ৩৭,১০৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এই আসনে জয়ী হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতনরাম মাঝিঁর পুত্রবধূ দীপা মাঝিঁ। তিনি ৫৩,৪৩৫ ভোট পেয়েছেন। রামগড়ে জন সুরাজের সুশীলকুমার ৬,৫১৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। বিজেপির অশোককুমার সিংহ ৬২,২৫৭ ভোট পেয়ে এই আসনে জয়ী হয়েছেন। তারারি আসনে জন সুরাজের কিরণ পেয়েছেন ৫,৫৯২ ভোট। এই আসনে বিজেপির বিশাল প্রশান্ত ৭৮,৫৬৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতির দলের ভোটজয়ের কৌশল স্থির করে দিয়েছেন প্রশান্ত। গত দু’বছর ধরে বিহারের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তাঁর ‘জন সুরাজ’ উদ্যোগ। প্রান্তিক মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের উপর চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছিল এই কর্মসূচি। ২০২২ সালে গান্ধীজয়ন্তীর দিন থেকেই শুরু হয়েছিল ‘জন সুরাজ’ উদ্যোগের প্রাথমিক পর্যায়ের যাত্রা। দু’বছর পর সেই একই দিনে পটনায় রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘জন সুরাজ’। প্রথম বার চার বিধানসভা আসনে ভোটে লড়ে হেরেছে চারটিতেই। এত দিন যে কৌশলে একের পর এক রাজনৈতিক দলের ভোট বৈতরণী পার করিয়েছেন পিকে, সে সবই কি তবে অচল হল? বিহারের রাজনৈতিক মহলে এখন এটাই প্রশ্ন।