ছবি: পিটিআই।
কেরলের কোঝিকোড়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থ এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানের ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর) পাঠানো হতে পারে আমেরিকায়।
দুর্ঘটনার পরে বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে প্রধান যে দু’টি তথ্যভাণ্ডার পাওয়া যায় তার একটি ডিএফডিআর এবং অন্যটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)। এই দু’টি যন্ত্রাংশকে ডি-কোড করলে দুর্ঘটনার আগে পাইলট ও কো-পাইলটের মধ্যে কথোপকথন, এটিসি-র সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা এবং শেষ মুহূর্তে বিমানের গতিবেগ, সেখানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না— সব কিছু জানা যায়।
সিভিআর ডি-কোড করার সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র সোমবার জানিয়েছে, ডিএফডিআর ডি-কোড করার কোনও ব্যবস্থা সরকারের নেই। বিভিন্ন বেসরকারি উড়ান সংস্থার থাকলেও সেখান থেকে সাধারণত এই ধরনের তদন্তে সাহায্য নিতে চান না তদন্তকারী অফিসারেরা। সে ক্ষেত্রে ডিএফডিআর পাঠানো হতে পারে আমেরিকায়, ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)-এর কাছে। আমেরিকা সরকারের অধীনে এই বোর্ড সব ধরনের তদন্তের কাজে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: রাহুলের বাড়ি গিয়ে ঘরে ফিরলেন সচিন
মন্ত্রকের ওই কর্তার কথায়, দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটি যেহেতু বোয়িং-এর তৈরি তাই বোয়িং-কে এমনিতেই এই তদন্তের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার একটি বেসরকারি টিভি সাক্ষাৎকারে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর ডিজি অরুণ কুমারও জানিয়েছেন, তদন্তের কাজে সাহায্য করতে আগামী সপ্তাহে বোয়িংয়ের দল ভারতে আসবে। কিন্তু, এখন নিয়মিত আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ। তা হলে ডিএফডিআর কী করে পাঠানো হবে?
মন্ত্রকের ওই কর্তা জানিয়েছেন, বন্দে ভারত উড়ানে পাঠানো যেতে পারে। নয়তো ভারতে বসে ডিএফডিআর এর তথ্য কম্পিউটার মারফত আমেরিকায় পাঠানোরও উপায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী, উড়ানে কোনও বিদেশি থাকলে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকেও তদন্তের কাজে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। তবে, গত শুক্রবার ওই বিমানে কোনও বিদেশি ছিলেন না বলেই মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।
সে দিনের দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন দুই পাইলট। আহত চার বিমানকর্মীর মধ্যে দু’জন এখনও হাসপাতালে। তাঁদের অবস্থা আগের থেকে ভাল বলে উড়ান সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিনই সংস্থাটি জানিয়েছে, আহত যে যাত্রীরা কোঝিকোড়ের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৫৬ জনকে ইতিমধ্যেই ছে়ড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও ৯৩ জন যাত্রী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিমানে সব মিলিয়ে ১৮৪ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁদের মধ্যে যে ১৬ জন যাত্রী মারা গিয়েছিলেন তাঁদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে সাহায্য করতে উড়ান সংস্থার কর্তারা এখনও রয়ে গিয়েছে কোঝিকোড়ে।
ঘটনাস্থলে তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে যখন পাইলট দীপক বসন্ত শাঠে এবং অখিলেশ কুমার বুঝতে পারেন যে বিমানকে কিছুতেই রানওয়ের মধ্যে থামানো যাবে না, তখন তাঁরা বিমান নিয়ে আবার উড়ে যেতে চেয়েছিলেন। তদন্তকারীরা ভেঙে পড়া বিমানের ককপিটের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, টেক-অফ লিভার উপর দিকে তোলা ছিল। যা দেখে মনে হয় যে, তাঁরা উড়ে যেতে চেয়েছিলেন। পাইলটদের একাংশের অবশ্য দাবি, বিমান ভেঙে পড়ার পরে যখন উদ্ধারকারীরা ককপিট থেকে দীপক ও অখিলেশকে উদ্ধার করেন, তখন তাঁদের কারও হাত লেগেও তো ওই লিভার উপরে উঠে যেতে পারে। শুধু লিভার দেখেই কী করে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হচ্ছেন?
বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, শুধু টেক-অফ করার ওই লিভার নয়, আরও কিছু তথ্য প্রমাণ, কিছু যন্ত্রের মাপকাঠি দেখেও মনে হয়েছে শেষ মুহূর্তে বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পাইলটেরা।