ছবি: পিটিআই।
এক দিকে শাসক দলের হাততালি। অন্য দিকে, বিরোধীদের ধিক্কার। এর মাঝেই সংসদে দাঁড়িয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তাঁর দাবি, নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন করে মহাত্মা গাঁধীর ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আশ্বাস, নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও শরণার্থীর সঙ্গেই ভেদাভেদ করা হবে না।
শুক্রবার সংসদে বাজেট অধিবেশনের শুরুতে প্রথামাফিক ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। রাজ্যসভা ও লোকসভার যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘‘দেশের বিভাজনের সময় মহাত্মা গাঁধী বলেছিলেন, পাকিস্তানের হিন্দু ও শিখ শরণার্থীরা সে দেশে বসবাস করতে না চাইলে এ দেশে আসতে পারেন। ওই শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়াটা ভারত সরকারের কর্তব্য। আমি আনন্দিত যে সংসদের দু’কক্ষেই সিএএ পাশ করে মহাত্মা গাঁধীর সেই ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়েছে।’’ সিএএ-র বিরুদ্ধে দেশজোড়া বিক্ষোভের আবহে রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যে উচ্ছ্বসিত করতালিতে ভরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি ও তার শরিক দলের সাংসদেরা। কিন্তু, রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্যেই তা নিয়ে তীব্র ধিক্কার জানাতে দেখা যায় বিরোধী সাংসদের। তৃণমূল-সহ বহু বিরোধী সাংসদেরা সিএএ, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর)-এর বিরুদ্ধে ব্যানার হাতে ধিক্কার দেন।
বিরোধীদের তুমুল হইচইয়ের মাঝেই এ দিন নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজের খতিয়ান দিয়ে রাষ্ট্রপতির আরও দাবি, জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পর জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে মানুষজন যে দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতোই উন্নয়নের সুফল লাভ করছেন, তা-ও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘‘সাত দশক পর কাশ্মীরে শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: আগামী অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ, জানাল আর্থিক সমীক্ষা
কাশ্মীর প্রসঙ্গ ছাড়াও আগামিকালের কেন্দ্রীয় বাজেটেরে আগে এ দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণে মোদী সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের কথাও উল্লেখ করে রামনাথ কোবিন্দ। দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়নে কেন্দ্রের বিশেষ নজর রয়েছে বলেও জানান তিনি। বোরো চুক্তির মাধ্যমে তা রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। দেশকে আরও মজবুত করার জন্য সরকার ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জামিয়ার বন্দুকবাজকে সংবর্ধনা দিতে চায় হিন্দু মহাসভা, ‘কে টাকা জোগাল’, প্রশ্ন রাহুলের
এ দিনের ভাষণে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে হিংসার প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি জানান, আন্দোলনে হিংসাত্মক রূপ দেশের মনোবলকেই ভেঙে দেয়। রাষ্ট্রপতির কথায়, ‘‘আলোচনা ও বিতর্ক গণতন্ত্রকে মজবুত করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে হিংসা দেশের মনোবল নষ্ট করে।’’