ফাইল ছবি
নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল সংসদের দু’টি কক্ষের অধিবেশন। রাজ্যসভার ১২ জন সাংসদের সাসপেন্ড হওয়া থেকে শুরু করে লখিমপুর খেরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের পদত্যাগের দাবি— সব মিলিয়ে শীতকালীন অধিবেশন আগাগোড়াই উত্তপ্ত থেকেছে। আধার সংখ্যার সঙ্গে ভোটার কার্ডে সংযুক্তি নিয়ে নির্বাচনী আইনের সংশোধন বিল পাশ করানো নিয়ে গত কাল প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয় অধিবেশন কক্ষে। রাজ্যসভায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সাসপেন্ডও করা হয় তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে আজ সমালোচনা করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সাংসদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হল। গোটা অধিবেশনের কার্যকলাপ প্রত্যাশার ধারেকাছে ছিল না। আপনাদের প্রত্যেককে সম্মিলিত ভাবে এবং ব্যক্তিগত ভাবে বলছি, আত্মসমীক্ষা করুন। কী ভাবে আরও অন্য রকম এবং ভাল ভাবে অধিবেশন চালানো যেত, তা নিয়ে ভাবুন। আমি নিজে থেকে এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কারণ, তা হলে আমাকে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিতে হবে।” পাশাপাশি সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেছেন, “বিরোধীরা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পরাজয় এখনও হজম করতে পারেননি। তাই অধিবেশন বানচাল করছেন। আধার সংখ্যা-ভোটার কার্ড সংযুক্তি নিয়ে নির্বাচনী আইনের সামান্য কিছু সংশোধন ছিল। তাই নিয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন যা করেছেন, তা সবাই দেখেছেন।”
মোদী সরকারকে আজ বিকেলেই আক্রমণ করেন ডেরেক। তাঁর কথায়, “হিটলার পার্লামেন্ট পুড়িয়েছিলেন। মোদী সংসদে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া ঘটাচ্ছেন। সংসদীয় মন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করে কোনও লাভ নেই। যা বলার বলতে হবে মোদী-শাহকেই। তাঁরা ঘাতকের ছুরি নিয়ে গণতন্ত্রের হৃদয়কে রক্তাক্ত করছেন।”
পাশাপাশি রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “সুবক্তা এবং সংসদে সক্রিয় ১২ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আমি ২৯ নভেম্বর রাতে এবং ৩০ নভেম্বর সকালেও সরকারকে বলেছি, আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে সকলের হয়ে দুঃখপ্রকাশ করছি। রাজ্যসভার নেতা পীযূষ গয়াল তখন বলেন, তিনি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। কিন্তু এর পর সরকার অবস্থান নেয়, প্রত্যেককে আলাদা ভাবে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে।’’ বিরোধী নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেটা বুঝলাম সংখ্যা গুনে। রাজ্যসভায় এনডিএ-র ১১৮ জন সাংসদ রয়েছেন। আর ইউপিএ, অন্যান্য ও নির্দল মিলিয়ে রয়েছেন ১২০ জন। সরকার জানত, তারা সংখ্যালঘু। কোনও বিল নিয়ে ভোটাভুটি হলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকত না। সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করার জন্য ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
রাজ্যসভার প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, “কিছু দল আলাদা ভাবে চলেছে ঠিকই। কিন্তু পেগাসাসের বিষয়টি নিয়ে যে ১৫টি বিরোধী দল এককাট্টা ছিল বাদল অধিবেশনে, শীতকালীন অধিবেশনে অজয় মিশ্র টেনির পদত্যাগ নিয়ে সেই ১৫টি দলই এককাট্টা থেকেছে।” কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “লোকসভা ঠিকই চলছিল। কিন্তু লখিমপুর খেরি কাণ্ড নিয়ে যে-ই হইচই শুরু হল, তখন ‘ল’ বললেই সংসদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে!” খড়্গেরও বক্তব্য, “রাজ্যসভাতেও দিনের পর দিন তাই হয়েছে। আমি চেয়ারম্যানের সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু এটা তো ঘটনা যে, শুধু ‘ল’ কেন, ‘অ’, ‘আ’ বলার আগেই চেয়ারম্যান অধিবেশন মুলতুবি করে দিয়েছেন!” আজ সংসদ অধিবেশনের শেষ দিনে গাঁধী মূর্তির সামনে সাসপেন্ড হওয়া ডেরেক-সহ ১৩ জন রাজ্যসভা সাংসদ সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করেছেন।