হামলার ঘটনা নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। ছবি: সংগৃহীত।
বিনামূল্যে বাইবেল বিলির প্রতিবাদে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবের চিহ্ন সরিয়ে দেওয়া হলেও ঘটনার পর থেকে এখনও আতঙ্ক কাটেনি দিল্লির প্রগতি ময়দানের বিশ্ব বইমেলা প্রাঙ্গনে গিডিয়নস ইন্টারন্যাশনালের স্টল কর্মীদের। গত কালই তাঁদের স্টলে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে তাণ্ডব চালায় একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী। তারা পোস্টার ছিঁড়ে, বই নিয়ে পালিয়েছে বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি বইয়ের দোকানিকে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পরে বিনামূল্যে বাইবেল বিলি বন্ধ রাখা হয়েছে দোকানটি থেকে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বাইবেল বিলির পোস্টারও। কিন্তু তা সত্ত্বেও আতঙ্ক কাটেনি অনেকেরই। তবে ওই হামলার ঘটনা নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এ দেশের প্রাচীনতম বইমেলা। রাজধানী দিল্লির প্রগতি ময়দানের বিশ্ব বইমেলা দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম। এ বছর অতিথিদের তালিকায় নাম রয়েছে গত বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপক অ্যানি এরনক্সের। এই অবস্থায় গত কালের ঘটনায় উদ্বিগ্ন আয়োজকেরা। এমনিতে পরীক্ষা এবং গরমের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করেই বইপ্রেমীরা এ বারে ভাল সংখ্যায় জমায়েত হচ্ছেন মেলায়। ভাল বিক্রির আশায় প্রকাশক এবং বিক্রেতারাও। তার মধ্যেই বাইবেল বিলি নিয়ে গোলমালের ছায়া।
শনিবার মেলায় ভিড় থাকলেও ওই দোকানটির সামনে জমায়েতের কারণ ছিল ভিন্ন। অনেকেই গত কালের ঘটনা দেখতে এবং জানতে এসেছিলেন। এই দোকানটির কাছেই একটি বইয়ের দোকান থেকে বিনামূল্যে গীতা বিলি করা হচ্ছে। পাশাপাশি বইমেলার মধ্যেই হিন্দু ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি রয়েছে ইসলামি এবং শিখ ধর্মগ্রন্থের দোকানও। এমন পরিবেশে তাঁদের দোকান করতে বা সেখান থেকে বই বিলি করতে সমস্যা হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তা হয়নি। যদিও বেছে বেছে কেন তাঁদের উপরে হামলা হল, বুঝতে পারছেন না গিডিয়নস-এর কর্মীরা। এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, তিনি গত দশ বছর ধরে এই বইমেলায় আসেন। এর আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবারের হামলার পরে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত বলে জানাচ্ছেন কর্মীরা।
গত কালের তাণ্ডবের পরে শনিবার দোকানটির কর্মীরা বাইবেল বিলির বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, জোর করে কাউকে বই দেওয়া বা কাউকে ধর্মান্তরিত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। যে সংগঠনটির তরফে বইমেলায় দোকান দেওয়া হয়েছে, সেটি ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের বহু জায়গাতেই এই ভাবে বই বিলি করে সংগঠনটি।
আরএসএস তথা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বহু দিন ধরেই অভিযোগ করছে, নানা রকম লোভ দেখিয়ে এবং টাকা বিলি করে খ্রিস্টধর্মের প্রচার এবং ধর্মান্তরণ করে একাধিক খ্রিস্টান সংগঠন। এর বিরোধিতায় নেমে গত কয়েক বছরে কর্নাটক, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে গির্জায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায় এই ধরনের হামলা বেড়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার দিল্লির বইমেলার ঘটনার পরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আগেভাগেই দাবি করেছে, ওই গোলমালের পিছনে তাদের কোনও হাত নেই।