মানিক-জায়া পাঞ্চালী। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে বিজেপির সরকার। জানুয়ারিতে দেশ জুড়ে দু’দিনের ধর্মঘটের ডাক কেন্দ্রের বিজেপি সরকারেরই বিরুদ্ধে। রাজরোষের মোকাবিলা করে কেমন হবে ধর্মঘট, আপাতত চিন্তায় তিনি। আম্বাসায় কনভেনশন সেরে ফিরতে ফিরতে বলছিলেন, ‘‘হয়তো জোর করে ভাঙবে! আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মানুষকে সঙ্গে নিয়েই সাধারণ মানুষের দুর্দশার প্রতিবাদ করার।’’
অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন দলের শ্রমিক ফ্রন্টে। ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য কমিটির নতুন সদস্য হওয়ার পরে কাজের ধরনে কোনও বদল হয়নি পাঞ্চালী ভট্টাচার্যের। সাধারণ দলীয় কর্মীর মতোই হাজির হচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে, মিশে থাকছেন সাধারণের ভিড়ে। রাজ্যে ২২ ডিসেম্বর নগর পঞ্চায়েত ও পুরসভার ১৫৮টি আসনে উপনির্বাচন। যার মধ্যে ৯১টাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে বিজেপি! আগরতলা পুরসভার চারটি আসনে অবশ্য সিপিএমের তিন এবং সিপিআইয়ের এক জন প্রার্থী লড়়াইয়ে আছেন। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল কী হয়, দেখে নিয়ে শহরে প্রচারেও বেরোতে চান পাঞ্চালীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতে আগরতলার মধ্যে জোর করে নাম তোলানোর চেষ্টা ওরা করে না। তবে পাঁচ রাজ্যের ফলের পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতেও পারে।’’
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও অধুনা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের স্ত্রী তিনি। কিন্তু তাতে কী? বিরোধী দলনেতা এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্যের গাড়িতে সফর করেন না। আগরতলায় সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে যে দিন রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন, সে দিনও টাউন হল থেকে বেরিয়ে মানিকবাবুর গাড়িতে উঠতে দেখা যায়নি তাঁকে। বাইরে পরিচিতদের সঙ্গে চা-পর্ব মিটিয়ে দলের মুখপত্রের এক কর্মীর বাইকে ফিরেছিলেন সেই একই পথে, যে দিকে খানিক আগে গিয়েছেন মানিক।
আরও পড়ুন: জন্মের শহরে মূর্তি নলজাতকের স্রষ্টার
ঠিকানা বলতে পাকা কিছু নেই। পার্টি অফিসের উপরে অতিথিদের জন্য বরাদ্দ দু’টো ঘর নিয়ে এখন পাঞ্চালীদের সংসার। বিরোধী দলনেতার সরকারি কোয়ার্টার তৈরি হয়ে গেলে সেখানে উঠে যাওয়ার কথা। সেটাও হবে আর এক অস্থায়ী আশ্রয়। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এই যুদ্ধ লড়়তে লড়়তেই রাজনৈতিক একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে মানিক-জায়ার! রাজ্য কমিটিতে ৮ মহিলা মুখের একটা তাঁর।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগীয় হেফাজতে জিতু, সরলেন পুলিশকর্তা
পাঞ্চালীদেবী অবশ্য এতে উচ্ছ্বাসের কিছুই দেখেন না। ‘‘দলের কর্মী আমি। দল যা দায়িত্ব দেয়, পালন করি।’’ আর মানিকবাবু তো এই নিয়ে আলোচনাতেই নারাজ। দু’জনেই নিজেদের গল্পের চেয়ে ঢের বেশি আগ্রহী রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনায়।
মানিকবাবু যখন মুখ্যমন্ত্রী, সরকারি আবাসন থেকেই রিকশা চেপে অফিস যেতেন পাঞ্চালীদেবী। দলের সম্মেলনে বাইরে গেলে উড়়ানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্ধারিত আসনের পাশে কখনও বসতেন না! সাধারণ যাত্রী হিসেবে অন্য সারিতে থাকাই তাঁর পছন্দ। ‘‘কুড়ি বছরে সরকারি গাড়িতে উঠিনি। রিকশা করে যাতায়াত করেছি। এখনও তা-ই করি।’’ বলছেন তিনি। সাধারণ পথে চলতে চলতেই মিলে যাওয়া স্বীকৃতি দলীয় ‘দায়িত্ব’ হিসেবেই নিয়েছেন যিনি।