লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি শীর্ষনেতা হাফিজ সইদ। —ফাইল চিত্র
কড়া পদক্ষেপ খুব বেশি হয়নি। গ্রেফতার করলেও লস্কর জঙ্গিনেতা হাফিজ সইদকে বেশি দিন জেলবন্দি করে রাখতে পারেনি পাকিস্তান। প্রশ্ন উঠেছে পাকিস্তানের সদিচ্ছা নিয়েই। জঙ্গি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হতেই ফের সেই প্রশ্ন তুলে দিল ভারত। পাকিস্তানকে তোপ দেগে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, পুরোটাই ‘লোক দেখানো পদক্ষেপ’ এবং বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। জঙ্গিদমনে মোটেই আন্তরিক নয় ইসলামাবাদ।
২৬/১১- র মুম্বই হামলার মুল চক্রী ছিল হাফিজ সইদ। ওই জঙ্গি হানায় হাফিজের চক্রান্তের ভূরি ভূরি তথ্যপ্রমাণ (ডসিয়ের) পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। তার পরও ভারতে একাধিক জঙ্গি হানায় নাম জড়িয়েছে লস্কর প্রধান হাফিজের। কিন্তু গত প্রায় দু’দশক ধরে পাকিস্তান কার্যত ব্যবস্থা নেয়নি হাফিজের বিরুদ্ধে। উল্টে পাকিস্তানের মাটিতে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে হাফিজ। ২০১৭ সালে চার সঙ্গী-সহ গ্রেফতার হলেও ১১ মাসের মাথায় তাদের ছেড়ে দেয় ইসলামাবাদ। আন্তর্জাতিক মহল বহুবার সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানকে কার্যকরী পদক্ষেপ করতে বলার পরও কার্যত কোনও কাজ হয়নি।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড (আইএমএফ) এবং ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে হবে। না হলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে ইসলামবাদকে। সেই হুঁশিয়ারির পরই তড়িঘড়ি হাফিজ সইদ এবং তার ১২ জন সঙ্গীর বিরুদ্ধে অন্তত ২৩টি মামলা করেছে পাকিস্তান। ইমরান খানের সরকার বার্তা দিয়েছে, অবিলম্বে হাফিজকে গ্রেফতার করা হবে।
কিন্তু এমন আশ্বাস যে পাকিস্তান বহুবার দিয়েছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য, ‘‘পাকিস্তানের আন্তরিকতা তখনই প্রমাণিত হবে, যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রামাণ্য কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে সাময়িক সন্তুষ্ট করতে অর্ধহৃদয়ে নয়।’’ পাকিস্তানকে নিশানা করে বিদেশ সচিব রভীশ কুমার বলেছেন, ‘‘আমরা যখনই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলি, আপনারা (পাকিস্তান) অস্বীকার করেন। সব সময় বহির্বিশ্বকে আপনারা কিছু দেখাতে চান। এটা দ্বিচারিতা।’’
আরও পডু়ন: চাপে পড়ে এ বার হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে মামলা করল ইসলামাবাদ
আরও পডু়ন: ১১৪টি যুদ্ধবিমান কিনতে দ্রুত টেন্ডার, বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির দোরগোড়ায় ভারত
কূটনৈতিক শিবিরও বিদেশ মন্ত্রকের এই বক্তব্যের দিকেই সায় দিচ্ছে। তাঁদের একটা বড় অংশের মত, আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়ে হাফিজের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেও তাকে যে গ্রেফতার করবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। অথবা গ্রেফতার করলেও আন্তর্জাতিক মহলের নজর সরলেই আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারে। অর্থাৎ ফের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নমনীয় অবস্থান নেওয়া এবং মদত দেওয়ার পুরনো ছকেই ফিরতে পারে ইসলামাবাদ।