পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের জবাব দিতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনা।
পূর্ব লাদাখে প্রকৄত নিয়ন্ত্রণরেখায় যখন চিনা বাহিনীর আগ্রাসন, জম্মু কাশ্মীরে গোলাবর্ষণ বাড়িয়ে চলেছে পাকিস্তানও। বিনা প্ররোচনায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে পাক সেনা। অস্ত্র ও মাদক পাচার করতে টার্গেট করছে উপত্যকার সাধারণ মানুষকে। সেনার একটি সূত্রে এমনই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এখনও পর্যন্ত এই সাত মাসেই আড়াই হাজারেরও বেশি বার অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। অথচ ২০১৯ সালে পুরো বছরে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল ১৫০০। এ বছর পুরো বছরের হিসেবে সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। পাকিস্তান যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
সেনা কর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের নিশানা হয়ে উঠছেন জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকার সাধারণ মানুষ। সেনা চৌকি ছেড়ে নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া গ্রামগুলিতে আছড়ে পড়ছে মর্টার-শেল। সেনা আধিকারিকদের মতে, এর অন্যতম কারণ, অস্ত্র ও মাদক পাচার। গত বছর পাকিস্তানের গোলাগুলিতে মৄত্যু হয়েছিল ২৮ জন সাধারণ নাগরিকের, আহত হয়েছিলেন ১২৭ জন। সেখানে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ইতিমধ্যেই ১৪ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। জখম হয়েছেন ৩৮ জন। সেনার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওরা (পাক সেনা) ইচ্ছাকৄত ভাবেই সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করছে। প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র পাচারের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।’’
আরও পড়ুন: বিধানসভা ডাকতে ফের গহলৌতের চিঠি, এড়ালেন আস্থা-প্রসঙ্গ
উদাহরণ দিয়ে ওই সেনা আধিকারিক বলছেন, শুধুমাত্র কেরন সেক্টরেই একাধিক অভিযানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। গত ২২ মার্চ আটটি একে সিরিজের অ্যাসল্ট রাইফেল, ন’টি পিস্তল ও ৭৭টি গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছিল। তার পর ৩১ মার্চে দু’টি একে অ্যাসল্ট রাইফেল, একটি পিস্তল এবং ৮ জুন তিনটি একে অ্যাসল্ট রাইফেল, পাঁচটি পিস্তল দু’টি আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার ও ৫৭টি গ্রেনেড মিলেছিল। চার দিন আগে ২২ জুলাইয়েও সেনার অভিযানে উদ্ধার হয়েছে একটি একে সিরিজের রাইফেল, পাঁচটি পিস্তল ও ২৪টি গ্রেনেড। এই সব অস্ত্রশস্ত্র যে সীমান্তের ওপার থেকেই পাচার হয়ে এসেছে, তা প্রায় নিশ্চিত সেনা গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: ‘বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তান’, নাম করেই মন কি বাত-এ আক্রমণ মোদীর
জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা রদের পর গোটা জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকা কার্যত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু সেই কড়াকড়ি উঠতেই মাথাচাড়া দিয়েছে জঙ্গি কার্যকলাপ। সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা। অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছে নিরন্তর। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এখনও পর্যন্ত সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে ১২ জন জঙ্গি। অর্থাৎ, এক দিকে ইসলামাবাদ জঙ্গি ও অস্ত্র ঢোকানো, অন্য দিকে লাগাতার অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে, গোলাবর্ষণ করে, উপত্যকার শান্তি স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাও যে অতন্ত্র প্রহরী, এবং কোনও রকম অস্থিরতা চেষ্টার মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত, সে কথাও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনার ওই আধিকারিক।