India

পাকিস্তান দূতাবাসের শার্জে দ্য’ফেয়ার-কে তলব করল নয়াদিল্লি

ইসলামাবাদও পাল্টা ভারতীয় হাই কমিশনের শার্জে দ্য’ফেয়ার-কে ডেকে পাঠিয়েছে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি, শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৭
Share:

—প্রতীকী ছবি

জম্মুর নাগরোটার ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিয়ে আজ পাকিস্তান দূতাবাসের শার্জে দ্য’ফেয়ার-কে তলব করল নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গে একটি কড়া বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করুক পাকিস্তান। সঙ্গে স্পষ্ট বার্তা— দেশকে সুরক্ষিত রাখতে যা যা পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, ভারত তা করতে প্রস্তুত।

Advertisement

ইসলামাবাদও পাল্টা ভারতীয় হাই কমিশনের শার্জে দ্য’ফেয়ার-কে ডেকে পাঠিয়েছে। তাদের বিদেশ মন্ত্রকও একটি বিবৃতি দিয়েছে, যাতে ভারতের অভিযোগ খণ্ডন করে দাবি করা হয়েছে পাকিস্তান কোনও নাশকতার চক্রান্তে যুক্ত নয়।

আরও পড়ুন: জম্মুসীমান্তে ফের গুলি, হত জওয়ান, নাশকতায় পাক ইন্ধন

Advertisement

চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন পূর্ব লাদাখে সংঘাত এবং তার পরিণামে নিজেদের ভূখণ্ড দখলে রাখতে গত সাত মাস প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে মোদী সরকার। তারই মধ্যে জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের অবিরত সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন এবং জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলেছে।

সূত্রের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদের হওয়া তুলতে পাক-বিরোধিতা বিজেপি সরকারের পছন্দসই নীতি ঠিকই। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়লে, তাকে সামলানোর দায়িত্বটাও প্রবল হয়ে ওঠে। আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট শাসনকালে উপত্যকাকে অশান্ত করে পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করেছে এর আগে অনেক বার। সে সব ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন দ্রুত নাক গলিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের সেটাই দস্তুর। গত এক মাস ধরে পাকিস্তানের লাগাতার হিংসা ছড়ানোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মকাণ্ডে সেই পুরনো নকশার ছায়া দেখছে কেন্দ্র। জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সীমান্তে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে ইসলামাবাদ, এমনটাই হিসাব করে দেখছেন রণকৌশল বিশেষজ্ঞরা।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব আজ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের শার্জে দ্য’ফেয়ারকে ডেকে পাঠিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারতের উপর আক্রমণের চেষ্টার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। দাবি জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও জঙ্গিদের সমর্থন করার নীতি বদলাক পাকিস্তান। জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করুক। ফের বলা হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর জন্য তাদের ভূখণ্ড যেন ব্যবহার না-করতে দেয় পাকিস্তান। এ ব্যাপারে তাদের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা এবং দ্বিপাক্ষিক প্রতিশ্রুতি মেনে চলুক তারা।’ এর পরই স্বর চড়িয়ে বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে জানাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে নিশ্ছিদ্র করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সীমান্তে ভারতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালানোর পাশাপাশি আজ পাকিস্তানের আদালত জমাত উদ দাওয়ার নেতা তথা মুম্বই হামলার প্রধান চক্রী হাফিজ সইদের দু’জন সহকারীকে সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর জন্য কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, এই ঘটনাগুলিতে উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। প্রথমত, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আইএসআই-এর কাছে হাফিজ সইদের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা কমেছে। বরং আন্তর্জাতিক নজরদারির সামনে (বিশেষত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ এবং এফএটিএফ) সে এখন তাদের বোঝা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে তাকে জেলে (আগের মতো গৃহবন্দি নয়) করে রাখা হয়েছে। ইমরান সরকারের পরিকল্পনা, আপাতত তাকে বন্দিই রাখা হবে। তাকে এবং তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের শাস্তি দিয়ে আমেরিকা, এফএটিএফ তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নিজের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা রয়েছে ইমরান সরকারের। তলে তলে কাশ্মীর সীমান্তে ছায়াযুদ্ধ বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আফগানিস্তানে লস্কর এবং জইশ জঙ্গিদের আরও বেশি করে পাঠিয়ে তালিবানদের মধ্যে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা সমান ভাবে চলবে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সাড়ে ছ’হাজার পাক জঙ্গি আফগানিস্তানে ছড়িয়ে গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কাবুলের পাশাপাশি ভারতে নাশকতা ও অনুপ্রবেশ বাড়ানোর জন্য লস্কর-ই-তইবা-র নেতা জাকির উল রহমান লকভিকে সামনে নিয়ে আসার কথাও ভাবছে পাক সরকার এমনটাই । হাফিজ সইদের সঙ্গে লকভির সম্পর্ক সাপে-নেউলে বলেই খবর সাউথ ব্লকের কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement