Ranen Ayan Dutt Death

রণেন আয়ন দত্তের প্রয়াণ

রবিবার দুপুরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে রাত আটটা নাগাদ রণেনের জীবনাবসান হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

নিজের বাড়িতে রণেন আয়ন দত্ত। —ফাইল চিত্র।

বিজ্ঞাপনী জগতে আর এক ধ্রুপদী মহীরুহের প্রস্থান। ৯৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন রণেন আয়ন দত্ত। বিজ্ঞাপন, ইলাস্ট্রেশন, প্রচ্ছদশিল্প থেকে সিনেমার প্রচারঅঙ্কন, স্থাপত্যসজ্জা— সর্বত্রই ‘আরএডি’-র স্বাক্ষর ছিল নিজস্বতায় প্রোজ্জ্বল।

Advertisement

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক ধরেই শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন। রবিবার দুপুরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে রাত আটটা নাগাদ রণেনের জীবনাবসান হয়।

জন্ম ১৯২৭ সালে, অধুনা বাংলাদেশের সিলেটে। পড়াশোনা কলকাতায়। ম্যাট্রিক পাশ করে সোজা সরকারি আর্ট কলেজ। শিক্ষক হিসেবে সেখানে পেলেন জয়নুল আবেদিন, আনোয়ারুল হক, মাখনলাল দত্তগুপ্ত, রমেন চক্রবর্তীদের। তার পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর যামিনী রায়ের এই গুণমুগ্ধকে বিজ্ঞাপন জগতে টেনে আনেন আর এক দিকপাল অন্নদা মুন্সী। মুন্সীর ‘প্রবেশিকা’ বিজ্ঞাপন সংস্থাতেই প্রথম চাকরি রণেনের। দেশ জুড়ে নাম ছড়াতে শুরু করল মুম্বইয়ে ‘স্ট্রোনঅ্যাকস’ সংস্থায় যোগ দেওয়ার পরে। সেখান থেকেই সুভাষ ঘোষালের ডাকে জেডব্লিউ টমসনে (পরে যার নাম হয় হিন্দুস্তান টমসন) যাওয়া। সাত দশকের কেরিয়ারের শেষ দিকে ওই সংস্থার প্রধান আর্ট ডিরেক্টরও হয়েছিলেন। টি বোর্ড, টাটা স্টিল, ফিলিপ্স, এয়ার ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে মাথার তেল, সিগারেটের একাধিক বহুল জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনী প্রচারের পিছনে তিনি। বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ শৌভিক মিশ্র বলছিলেন, ‘‘রণেন যে সময়টা কাজ করছেন, তখন ছবি দিয়ে গল্প বলার একটা ধারা তৈরি হচ্ছে বিজ্ঞাপনে। বাংলা বিজ্ঞাপনের ইলাস্ট্রেশনে উনি একটা দেশজ শৈল্পিক ধারা নিয়ে আসেন। এই বাঙালি স্টাইলটা উনি সর্বভারতীয় স্তরেও বিখ্যাত করে তোলেন।’’

Advertisement

বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ‘দেশ’, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র পাতায় বহু গল্পের সঙ্গে ছবি এঁকেছেন রণেন, প্রচ্ছদ করেছেন। সুভো ঠাকুরের ‘সুন্দরম’ পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর স্কেচ এবং ইলাস্ট্রেশন ছাপা হত। অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, প্রবোধকুমার সান্যালের ‘অগ্নিসাক্ষী’, দীপক চৌধুরীর ‘দাগ’, অবধূতের ‘কলিতীর্থ কালীঘাট’-এর মতো বইয়ের প্রচ্ছদ, ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার শিল্প পরিকল্পনা রণেনের করা। তপন সিংহের ‘কাবুলিওয়ালা’, অরুন্ধতী দেবীর ‘ছুটি’ ছবির প্রচার-অঙ্কনের দায়িত্বেও রণেন। ছবি এঁকে দিয়েছিলেন ‘হারানো সুর’ ছবির জন্যও।

স্থাপত্যসজ্জার প্রাঙ্গণেও রণেন আয়ন একাধিক সুখ্যাত কাজ করে গিয়েছেন। দিল্লির বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন, মুম্বইয়ের এয়ার ইন্ডিয়া ভবন, রাঁচীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কোল ম্যানেজমেন্ট ভবনের সজ্জার দায়িত্ব সামলেছেন রণেন। ১৯৭২ সালে দিল্লিতে এশিয়া ৭২-এর মেলামণ্ডপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার আর্কাইভ, রামমোহন রায় স্মারক সংগ্রহশালা, দুর্গাপুর স্টিল মিউজিয়াম বা গঙ্গায় জাহাজ পরিবহণ সংগ্রহশালা অন্দরসজ্জাও তাঁরই করা। চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী সাড়া ফেলেছিল রসিক মহলে। ১৯৭৪ সাল থেকেই গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব সংস্থা ‘আরএডি অ্যাসোসিয়েটস’ও। রণেন আয়নের প্রয়াণে বহুমুখিতার একটি অধ্যায় শেষ হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement