—ফাইল চিত্র।
তুলনামূলক ভাবে স্বল্প পরিচিত অথচ জনসেবায় নিয়োজিত মুখ পদ্ম-সম্মানে তুলে আনার কাজটা গত কয়েক বছর ধরেই করে আসছে মোদী সরকার। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল নতুন চমক। সরকার ও দলের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বেশ কয়েক জনের পাশাপাশি বেছে নেওয়া হল আপাত ভাবে ‘ভিন্ন শিবিরে’র কিছু নামও। অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজ-মনোহর পর্রীকরের পাশাপাশি মরণোত্তর সম্মান পেলেন জর্জ ফার্নান্ডেজ।
জম্মু-কাশ্মীরে বিরোধী নেতৃত্বের অধিকাংশই বন্দি হয়ে রয়েছেন। শনিবারই সামনে এসেছে এনসি-র ওমর আবদুল্লার দাড়িওয়ালা ছবি। একই দিনে প্রবীণ পিডিপি নেতা মুজফফর হুসেন বেগকে পদ্মভূষণ সম্মানের জন্য বেছে নিল সরকার। গত বছর এই মুজফ্ফরই দলীয় নীতির বাইরে গিয়ে কাশ্মীরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মেহবুবা মুফতির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এই আবহে মুজফ্ফরের পদ্ম-সম্মানে রাজনীতির অঙ্কই প্রকট বলে মনে করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে দেশজোড়া প্রতিবাদী হাওয়া, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘অসহিষ্ণু ভারত’ নিয়ে লেখালেখির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্ম সম্মানে কিছু ‘নিরীহ চমক’ দিয়ে সরকার ঘরে-বাইরে একটা বার্তা দিতে চাইল বলেও মনে হচ্ছে। যেমন প্রবীণ কংগ্রেসি এস সি জামির। পদ্মভূষণ পাচ্ছেন নাগাল্যান্ডের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার পদ্মশ্রী তালিকায় বীরভূমের চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও কংগ্রেসের। যে দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেস দলকে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’ বলে অভিহিত করেছেন। সেই দলের দুই প্রবীণকে বেছে নেওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন অনেকেই। অনেকের আবার মত হল, বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য হল গাঁধী পরিবার। মোদী-শাহ দাবি করেন, কংগ্রেসে গাঁধী পরিবারের বাইরে কেউ সম্মান পান না। সে ক্ষেত্রে প্রবীণ কংগ্রেসিদের পদ্ম-সম্মান দিয়ে বিজেপি দেখাতে চায়, তারাই প্রকৃত উদার, গুঞ্জন রাজনৈতিক শিবিরে।
আরও পড়ুন: ধর্মের বিভাজন থেকে কি সত্যি মুক্ত রাখার চেষ্টা হয়েছিল সংবিধানকে? প্রশ্ন জয়পুরে
ঠিক যেমন জর্জ ফার্নান্ডেজ বাজপেয়ী জমানায় এনডিএ-র মন্ত্রী থাকলেও হিন্দুত্ববাদী বলে পরিচিত ছিলেন না কখনওই। তিনি জেটলি-স্বরাজদের সঙ্গে একাসনে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ হচ্ছেন। সত্তরের দশকে ইন্দিরা গাঁধী-বিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার কথা মনে রেখেই এই মনোনয়ন, মনে করছেন অনেকে। ভোপাল গ্যাসপীড়িতদের জন্য আন্দোলনকারী, প্রয়াত আবদুল জব্বারের অন্তর্ভুক্তির পিছনেও কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলার উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন থাকতে পারে বলে কারও কারও ধারণা। শিল্পপতি আনন্দ মহীন্দ্রা পদ্মভূষণ পাচ্ছেন। তিনিও একাধিক বার মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। অর্থনীতির ঝিমুনি থেকে জেএনইউ হামলা, আনন্দ মুখ খুলতে দ্বিধা করেননি। তাঁকে সম্মানিত করে উদারতার বার্তাই দেওয়া হল বলে রাজধানীর অলিন্দে জল্পনা চলছে।
পদ্ম সম্মান*
পদ্মবিভূষণ
জর্জ ফার্নান্ডেজ (মরণোত্তর, রাজনীতিক), অরুণ জেটলি (মরণোত্তর, রাজনীতিক), সুষমা স্বরাজ (মরণোত্তর, রাজনীতিক), মেরি কম (ক্রীড়াবিদ)
পদ্মভূষণ
প্রভু পর্রীকর (মরণোত্তর), মাধব মেনন (মরণোত্তর, আইনবিদ), মুজফ্ফর হুসেন বেগ (রাজনীতিক), এস সি জামির (রাজনীতিক)আনন্দ মহীন্দ্রা (শিল্পপতি),
পি ভি সিন্ধু( ক্রীড়াবিদ), বালকৃষ্ণ দোশি (স্থপতি),
বেণু শ্রীনিবাসন (শিল্পপতি)
পদ্মশ্রী
আবদুল জব্বার (মরণোত্তর, সমাজকর্মী), কর্ণ জোহর (চিত্রপরিচালক-প্রযোজক), একতা কপূর (প্রযোজক), কঙ্গনা রানাবত (অভিনেত্রী), আদনান সামি (সঙ্গীতশিল্পী), সুরেশ ওয়াডকর (সঙ্গীতশিল্পী), সরিতা জোশী (অভিনেত্রী)
*নির্বাচিত তালিকা
বলিউডের পদ্ম তালিকা নিয়েও চর্চা জমে উঠেছে। কঙ্গনা রানাবত বেশ কিছু দিন ধরে দৃশ্যতই সরকারের কাছের লোক। নিত্যনতুন কুকথার জন্য শিরোনামে আসা তাঁর সম্মান প্রাপ্তিতে বাধা হয়নি। কর্ণ জোহর গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজস্বী তোলার দলে ছিলেন। বলিউডের অনেক নায়ক-নায়িকা তাঁর ডাকেই সে বার জড়ো হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তিনিও সম্মানিত হচ্ছেন। কর্ণ আর কঙ্গনা এক সময় প্রায়ই বচসায় জড়াতেন। কঙ্গনার অভিযোগ ছিল, কর্ণ স্বজনপোষণের পান্ডা। পদ্ম-সম্মান দু’জনকে এক সারিতে বসাল। ওঁরা কি এখন ‘স্বজন’? মুখ টিপে হাসছেন নিন্দুকরা। পাক গায়ক আদনান সামি এখন ভারতের নাগরিক। তিনিও সম্মানিত। সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল এমএনএস। দলের পক্ষ থেকে আদনানকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।