ফাইল চিত্র।
কোভিডের সময় অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে পরিসংখ্যান বা ‘ডেটা’ নেই। করোনাকালে গঙ্গায় কত শবদেহ ভাসানো হয়েছে তার পরিসংখ্যানও কেন্দ্রের কাছে নেই। লকডাউনের পরে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছেন, নেই তার তথ্যও। চাষিদের আয় দ্বিগুণ হওয়া নিয়ে তথ্য নেই। অথচ ২০২২ সালে এই চাষিদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
একের পর এক উদাহরণ দিয়ে আজ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে ‘নো ডেটা অ্যাভেলেবল’ সরকার বলে অভিহিত করলেন। তাঁর কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের নেতা বলেন। সংসদে প্রশ্ন করলে তাঁর সরকার বলে, টুকরে টুকরে গ্যাং নিয়েও সরকারের কাছে তথ্য নেই।
বাজেট নিয়ে বিতর্কে আজ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম মোদী সরকারের কর্মসংস্থান, বেকারত্বের তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। চিদম্বরমের বক্তব্যের ঠিক আগেই
রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় জবাব দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ইপিএফও-র খাতায় নথিভুক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি দেখিয়ে দাবি করেছিলেন,
মোদী জমানায় কর্মসংস্থান বেড়েছে। চিদম্বরম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত ছিল যে কেন্দ্রীয় সরকারেই এখন ৮ লক্ষ ৭২ হাজার ২৪৩টি শূন্যপদ রয়েছে।’’ ‘সর্বশক্তিমান’ মোদী সরকার ৭৮ হাজারের মতো পদে নিয়োগ করেছে। বাকি ৮ লক্ষ পদ খালি রেখে দিয়েছে। প্রতি বছরে ৪৭.৫ লক্ষ তরুণ-তরুণী কাজ খুঁজতে
মাঠে নামছেন। বাজেটে ৫ বছরে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলা হয়েছে। চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘বাকিরা কী করবেন? পকোড়া ভাজবেন?’’ এ বারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পরিকাঠামোয় খরচে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, গত বাজেটেও তিনি বলেছিলেন, ৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা পরিকাঠামোয় খরচ করবেন। সংশোধিত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তিনি ৬.০২ লক্ষ কোটি টাকা খরচের কথা বলছেন। কিন্তু তার মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা এয়ার ইন্ডিয়ার বকেয়া ঋণ শোধ করার জন্য। বাস্তবে খরচ বাজেটের প্রাথমিক অনুমানের তুলনায় কম।
রাজকোষ ঘাটতির মতো বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের লক্ষ্যও যে অর্থমন্ত্রী ছুঁতে পারেননি, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি চিদম্বরম। তিনি বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী বিলগ্নিকরণ থেকে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণের সময়ই যথেচ্ছ বেসরকারিকরণ না করে সাবধান হতে বলেছিলাম।
অর্থমন্ত্রী সাবধান হয়েছেন। ৭৮ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলেছেন। দু’বছর আগে অর্থমন্ত্রী ভারত পেট্রোলিয়াম, শিপিং কর্পোরেশন, কন্টেনার কর্পোরেশন বিলগ্নিকরণের কথা বলেছিলেন। গত বাজেটে ২টি ব্যাঙ্ক, একটি বিমা সংস্থার বিলগ্নিকরণের কথা বলেছিলেন। এখন আর তা শোনা যায় না।’’
প্রধানমন্ত্রী আজও বলেছেন, বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। মূল্যবৃদ্ধি মাঝারি মাত্রায় রয়েছে। চিদম্বরম বলেন, ‘‘বাস্তব হল, দ্রুত গতির অর্থনীতি হলেও বাস্তবে আমরা দ্রুত গতিতে কোভিডের আগের স্তরে পৌঁছতে পারছি। অর্থমন্ত্রী বাজেটে আগামী বছরে মূল্যবৃদ্ধি-সহ আর্থিক বৃদ্ধির হার ১১.১ শতাংশ বলেছিলেন। আর্থিক সমীক্ষায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।’’ চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘এর মধ্যে কোন হিসেব সঠিক? না কি অর্থমন্ত্রী মাত্র ৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন?”