Anti BJP Alliance

মোদীশাসন শেষ করতে বিরোধীদের যৌথ অস্ত্র ‘ইন্ডিয়া’, মমতার দেওয়া নামে সায় ‘প্রিয়’ রাহুলের

বিজেপি বিরোধিতার উদ্দেশ্যেই আত্মপ্রকাশ করল নতুন জোট— ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। যার নামকরণে মমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ১২:০২
Share:

বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের বৈঠকে বক্তৃতা মমতার। ছবি: পিটিআই।

১৯ বছর পরে ইতিহাসের পাতায় চলে গেল ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)। তবে বদলাল না ‘লক্ষ্য’। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেস নেতৃত্বে জাতীয় স্তরে যে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরি হয়েছিল, মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে তার কার্যত অবলুপ্তি ঘটল। বিজেপি বিরোধিতার উদ্দেশ্যেই আত্মপ্রকাশ করল নতুন জোট— ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। যার নামকরণে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর।

Advertisement

বেঙ্গালুরু বৈঠকে হাজির তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সোমবার রাতে সনিয়া গান্ধীর নৈশভোজের আগেই বৈঠকে কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল নতুন জোটের নাম।’’ তিনি জানান, ওই বৈঠকে প্রথম বক্তা ছিলেন মমতা। শেষ বক্তা রাহুল। তৃণমূল নেত্রী তাঁর বক্তৃতায় বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ প্রস্তাব করেন। এর পর অরবিন্দ কেজরীওয়াল, শরদ পওয়ার, অখিলেশ যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, মেহবুবা মুফতিরা সমর্থন করেন মমতার প্রস্তাব। শেষ বক্তা রাহুল জানান, তৃণমূল নেত্রী যে নাম প্রস্তাব করেছেন তাতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিরোধী জোটের নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা ছিল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ছিলেন তিনিও। বস্তুত, বিরোধী জোটের বৈঠক ঘিরে সোমবার রাত থেকেই নানা নতুন সমীকরণের খণ্ডচিত্র দেখছিল পটনা। মঙ্গলবারের দুপুরের সাংবাদিক বৈঠক আবার প্রমাণ করল সেই পুরনো আপ্তবাক্যের সারবত্তা— ‘পলিটিক্স মেক্‌স স্ট্রেঞ্জ বেডফেলোজ’ (যার অর্থ, রাজনীতি বিচিত্র সঙ্গী তৈরি করে)! যে সাংবাদিক বৈঠকে, নতুন জোটের নাম নিয়ে দ্বিতীয় বক্তা মমতা বললেন, ‘‘পারলে আমাদের হারাও।’’ প্রশ্ন তুললেন, ‘‘এনডিএ কি পারবে ইন্ডিয়া (বিরোধীদের নয়া জোট)-কে চ্যালেঞ্জ করতে? বিজেপি কি পারবে?’’ একই সুরে পঞ্চম বক্তা রাহুল বললেন, ‘‘যখনই কেউ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে লড়েছে, হেরে গিয়েছে।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই দিল্লির অশোক হোটেলে ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বৈঠক। বিজেপির আয়োজনে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী জোটকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘ওটা তো দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের জোট।’’ ঘটনাচক্রে, পিছনেই তখন বসে কয়েক হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বিদ্রোহী ভাইপো অজিত পওয়ার। সে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে একদা যাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এনসিপি মানে ন্যাচারালি করাপ্ট পার্টি।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শের দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানে থাকা বিভিন্ন দলগুলি শুধুমাত্র মোদীর বিরোধিতাকে পুঁজি করেই যে এক মঞ্চে এসেছে তা বুঝতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সে কারণে গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক তিনি।

কোন ২৬টি দল বৈঠকে?

২৩ জন পটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে ছিল ১৫টি দল। মঙ্গলবার সেই তালিকা বেড়ে হল ২৬। এই দলগুলি হল— কংগ্রেস তৃণমূল, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি (আপ), জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), এনসিপি (শরদ), শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদল, আপনা দল (কামেরাওয়াদি), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এমডিএমকে, ভিসিকে, কেডিএমকে, এমএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরল কংগ্রেস (মণি) এবং কেরল কংগ্রেস (জোসেফ)।

পরবর্তী বৈঠক মুম্বইতে

গত ২৩ জুন পটনায় বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠক হয়েছিল। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে হল দ্বিতীয় বৈঠক। সাংবাদিক বৈঠকের প্রথম বক্তা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে জানিয়েছেন পরবর্তী বৈঠক হবে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বইয়ে। অর্থাৎ এই প্রথম বিজেপি জোট শাসিত কোনও রাজ্যে বিরোধীদের বৈঠক হবে। ঘটনাচক্রে ওই রাজ্যেই উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদের এনসিপি-কে ভেঙে এনডিএ-র কলেবর বৃদ্ধি করেছে বিজেপি।

নাম বদল হলেও নয়া জোটের চেয়ারপার্সন বা আহ্বায়ক পদ আপাতত ঘোষণা করা হয়নি বেঙ্গালুরুতে। মুম্বইয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে বিরোধী জোটের তরফে ইঙ্গিত মিলেছে মঙ্গলবার। ক্ষমতা হারানোর পরে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি (শরদ)- শিবসেনা (উদ্ধব)-কে গঠিত ‘মহা বিকাশ অঘাড়ি’ জোট কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে বিআর অম্বেডকরের নাতি তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রকাশ অম্বেডকরের নেতৃত্বাধীন ‘ভারিপা বহুজন মহাসঙ্ঘ’ এবং আরও কিছু ছোট দলকে দেখা যেতে পারে সূত্রের খবর।

আমাদের প্রিয় রাহুল’, বললেন মমতা

বিরোধী জোটের নেতাদের আলোচনার শেষে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে সঞ্চালক ছিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের পরেই বক্তৃতার জন্য মমতাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। বক্তব্যের সূচনাতেই খড়্গে-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের শুভেচ্ছা জানান মমতা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাহুলকে তিনি সম্বোধন করেন ‘প্রিয় (ফেভারিট) রাহুল গান্ধী’ বলে।

বিমান বিভ্রাটে সনিয়া-রাহুল

বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের বৈঠক সেরে দিল্লিতে ফেরার পথে বিমান বিভ্রাটের শিকার হলেন সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে জরুরি অবতরণ করে তাঁদের বিমান। ভোপাল পুলিশ জানিয়েছে, আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ দিল্লিগামী সেই চার্টার্ড বিমান ভোপাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ৯টায় ভোপাল থেকে দিল্লিগামী অন্য বিমানে চাপেন সনিয়া এবং রাহুল। জরুরি অবতরণের পর ভোপাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করেন তাঁরা।

বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ

তবে বিরোধী দলগুলি কত দিন একসঙ্গে থাকবে, তা বলায় সময় এখনও আসেনি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, শুক্রবার পটনার বৈঠকে যে ২৬ নেতা-নেত্রীকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে, তাঁরা লোকসভা ভোট পর্যন্ত একসঙ্গে থাকবেন কি না, তা অনিশ্চিত। তাঁদের মতে, সাধারণ ভাবে এমন ‘রামধনু’ সমীকরণের শুরুতে ঐক্যের সুর চড়া থাকলেও আসনভিত্তিক আলোচনা শুরুর পরেই ধীরে ‘তাল কাটতে’ শুরু করে। সম্ভবত এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই খড়্গে জানিয়েছেন, বিরোধী জোটের ১১ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। তিনি জানান, মুম্বইয়ে জোটের পরবর্তী বৈঠকের আগেই চূড়ান্ত হবে কমিটির সদস্যদের নাম। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী সমমনস্ক দলগুলি যাতে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে পারে, তার জন্য বেঙ্গালুরুতে সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। কংগ্রেস সভাপতি জানান, অভিন্ন কর্মসূচির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি পৃথক কমিটি গঠন করা হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় লেখা হয়েছিল, ‘তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নাম নেননি’। এটি সর্বৈব ভুল। অনবধানতাবশত এই গুরুতর ভুল হয়েছিল। সেটি গোচরে আসার পরেই আমরা তা সংশোধন করেছি। এই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেটিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নিঃশর্তে ক্ষমাপ্রার্থী।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement