গত ছয় দশকে পশ্চিমবঙ্গ আর্থিক মাপকাঠিতে অন্য রাজ্যের তুলনায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদ্য প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, পশ্চিম ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি যখন অর্থনীতির দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ পিছিয়ে গিয়েছে। ১৯৬০-৬১ অর্থ বছরে দেশের জিডিপি-তে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ছিল প্রায় ১০ শতাংশের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশের জিডিপি-তে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ৫ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব স্যান্যাল এবং যুগ্ম-অধিকর্তা আকাঙ্ক্ষা অরোরার তৈরি এই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির অর্থনীতির অবস্থা বরাবরই চিন্তার কারণ। তবে পশ্চিমবঙ্গ কয়েক দশক ধরে আর্থিক মাপকাঠিতে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় লাগাতার পিছিয়ে পড়েছে। বিহারের তুলনামূলক অবস্থান গত দু’দশকে কিছুটা থিতু হয়েছে। বিহার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। বাকিদের সমান সারিতে আসতে যথেষ্ট আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন ছিল। ওড়িশা বরাবরই পিছিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক বছরে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। সামগ্রিক ভাবে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বাদে সমুদ্রের সঙ্গে লাগোয়া রাজ্যগুলি অন্যদের ছাপিয়ে গিয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৬০-৬১ অর্থ বছরে পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু আয় জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। কিন্তু রাজ্য তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। ফলে পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু আয় জাতীয় গড়ের তুলনায় কমে গিয়েছে। ২০২৩-২৪-এ পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু আয় রাজস্থান, ওড়িশার মতো বরাবর পিছিয়ে থাকা রাজ্যের তুলনাতেও কমে গিয়েছে।
ষাটের দশকে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও বিহার থেকে দেশের জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫৪ শতাংশ উৎপাদন হত। মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু—এই তিনটি রাজ্যে দেশের শিল্পের সবথেকে বড় ঠিকানা ছিল। পরবর্তী কালে মহারাষ্ট্র সাফল্য ধরে রাখলেও শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ক্রমশ কমেছে। এই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ১৯৯১-এর আর্থিক সংস্কারের সুবিধা নিয়ে তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি অন্যান্য রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ কি বিজেপির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই এই গবেষণাপত্র তৈরি করেছে? সরকারি ভাবে বলা হয়েছে, এই গবেষণাপত্র লেখকদের নিজস্ব বক্তব্য, পরিষদের বক্তব্য নয়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, মোদী সরকার বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। এ বারের বাজেটেও পূর্বোদয়-এর জন্য পরিকাঠামো প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।