রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে শীর্ষ আদালতের চার প্রবীণ বিচারপতি যখন ২০১৮-র জানুয়ারিতে ঐতিহাসিক সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, তখন রঞ্জন গগৈয়ের পাশেই বসে ছিলেন তাঁর দুই সতীর্থ, মদন বি লোকুর ও কুরিয়ান জোসেফ।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় মনোনীত করার পরে আজ প্রাক্তন বিচারপতি লোকুর প্রশ্ন তুললেন, ‘‘তা হলে কি শেষ দুর্গেরও পতন হল?’’ প্রাক্তন বিচারপতি জোসেফ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘‘যিনি এক সময় বিচারবিভাগের স্বাধীনতা তুলে ধরতে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন, সেই প্রাক্তন বিচারপতি গগৈ বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করছেন দেখে আমি বিস্মিত।’’
সোমবার রাতেই রাষ্ট্রপতি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গগৈকে রাজ্যসভায় মনোনীত করার পরেও অনেকের মনে আশা ছিল, তিনি হয়তো এই পদ গ্রহণ করবেন না। কিন্তু আজ গুয়াহাটিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গগৈ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন। গুয়াহাটি থেকে দিল্লি রওনা হওয়ার আগে গগৈ বলেন, ‘‘প্রার্থনা করি, ইশ্বর যেন সংসদে স্বাধীন মতামত প্রকাশের শক্তি আমায় দেন। অনেক কথাই বলার আছে। শপথ গ্রহণের পরে সব বলব।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কখনও কখনও বিচারবিভাগ ও আইনসভাকে দেশ গঠনের স্বার্থে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হয়। সংসদে আমার উপস্থিতি বিচারবিভাগের দৃষ্টিভঙ্গি আইনসভার সামনে তুলে ধরা ও আইনসভার মতামত জানার সুযোগ এনে দেবে।’’
তাতে অবশ্য সমালোচনার ঝড় থামছে না। দীপক মিশ্র সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন আদালতে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে গগৈ-সহ চার প্রবীণ বিচারপতি মুখ খুলেছিলেন। সে কথা মনে করিয়ে আজ প্রাক্তন বিচারপতি জোসেফ বলেন, ‘‘বিচারপতিরা পক্ষপাতদুষ্ট, সুযোগসন্ধানী বলে ধারণা তৈরি হয়ে মানুষের আস্থা নড়ে গেলে, রাষ্ট্রের ভিত নড়ে যাবে। এই ভিতে বিপদের কথা বলতেই আমরা প্রকাশ্যে এসেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, সেই বিপদ আরও বড় হয়ে উঠেছে।’’
অযোধ্যা থেকে রাফাল তদন্ত, ৩৭০ রদের পর কাশ্মীরিদের হেবিয়াস কর্পাসের আর্জি, অসমে এনআরসি— অবসরের আগে প্রধান বিচারপতি গগৈয়ের একের পর এক রায় বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা করে দিয়েছে বলে বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, অবসরের চার মাসের মধ্যেই তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা সে সব রায়েরই পুরস্কার কি না।
প্রশ্নের মুখে আজ বিজেপি পাল্টা জানিয়েছে অতীতে বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র, বিচারপতি বাহারুল ইসলামকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এর জবাবে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘বাহারুল ইসলাম রাজ্যসভায় ছয় বছর থাকার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মিশ্র রাজ্যসভায় এসেছিলেন অবসরের ছয় বছর পরে। বিচারপতি হেদায়েতুল্লা অবসরের নয় বছর পরে উপ-রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।’’ পাশাপাশি বিজেপির কটাক্ষ, বিচারপতি গগৈ যখন মোদী সরকারের নাক গলানোর অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন, তখন তিনি খুব ভাল ছিলেন। এখন তাঁকে রাজ্যসভায় আনতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল?
রাজনৈতিক শিবিরে অবশ্য আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে। তা হল, সমালোচনা হবে জেনেও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে কেন তড়িঘড়ি রাজ্যসভায় আনা হল? কেনই বা তিনি রাজি হলেন? তিনি কি মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন? সে ক্ষেত্রে গগৈকে খাতায়-কলমে বিজেপি-তে যোগ দিতে হবে। সত্যিই এমন হলে তা অভূতপূর্ব হবে।