ফাইল চিত্র।
বিরোধী জোট না হলে উত্তরপ্রদেশের ভোটে কারও একার পক্ষে বিজেপিকে হারানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে। এবিপি নিউজ-সি ভোটারের জনমত সমীক্ষা বলছে, আসন কমলেও ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপিই ফের জিততে চলেছে। ভোটের আর মাস ছয়েক বাকি থাকলেও এখনও বিরোধীদের মধ্যে জোটের কোনও ইঙ্গিত নেই। উল্টে এসপি, বিএসপি-র পরে আজ কংগ্রেসও ঘোষণা করেছে, উত্তরপ্রদেশে কোনও বড় দলের সঙ্গে জোট নিয়ে তারা ভাববেই না।
এবিপি নিউজ-সি ভোটারের জনমত সমীক্ষা জানিয়েছে, গত বারের তুলনায় গোটা ষাটেক আসন কমলেও বিজেপিই ফের উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়তে পারে। এই সমীক্ষার ফল মানছেন না এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব। তাঁর দাবি, ‘‘২০২২-এ সমাজবাদী পার্টিই ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।’’
কী ভাবে এই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন অখিলেশ? রবিবার মুজফ্রফরনগরে কৃষকদের মহাপঞ্চায়েতে লক্ষাধিক কৃষক এককাট্টা হয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকার ও রাজ্যের যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। একই দিনে ভদোহীতে জনসভা করেছেন অখিলেশ। অখিলেশের দাবি, ‘‘এটাই পরিবর্তনের আওয়াজ। বিজেপির গদিচ্যুত হওয়া নিশ্চিত।’’ কৃষকদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় লোক দলের জয়ন্ত চৌধরিও বিজেপিকে হারানোর স্বপ্ন দেখছেন। একই ভাবে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে মনে করে কংগ্রেসও আশা করছে, ভোটে তার সুফল মিলবে।
কিন্তু বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে কি বিজেপিরই সুবিধা হবে না? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার লাল্লুর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ছোটখাটো দলের সঙ্গে জোট করতে পারে। কিন্তু আমি বড় দলের সঙ্গে জোটের কথা ভাববই না।’’ কংগ্রেসের কর্মীদের প্রশিক্ষণে একই সঙ্গে মায়াবতীর বিএসপি, অখিলেশের এসপি ও যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকারের খামতিগুলো কী ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে, তা শেখানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে তৃণমূলের জয়ের পরে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী জোট নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী নিজেই এ নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফের বিজেপি জিতলে বিরোধী জোটের সম্ভাবনা শুরুতেই মিইয়ে যাবে বলে আশঙ্কা। সনিয়ার ডাকা বিরোধী দলগুলির বৈঠকে অধিকাংশ বিরোধী দল হাজির থাকলেও অখিলেশ তাতে যোগ দেননি। মায়াবতীকে বৈঠকে ডাকাই হয়নি। ওই বৈঠকেই প্রশ্ন উঠেছিল, যদি উত্তরপ্রদেশেই বিরোধী জোট না হয়, তা হলে জাতীয় রাজনীতিতে এখনই বিরোধী জোট নিয়ে সক্রিয় হয়ে লাভ কী? কারণ উত্তরপ্রদেশে জিতলে বিজেপি ফের ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে এগিয়ে যাবে। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে বিরোধীরা জোট করলেও নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের জনপ্রিয়তায় ভর করে বিজেপি ফের জিতবে। জনমত সমীক্ষার চেয়েও বেশি আসন পাবে।
এই পরিস্থিতিতেও কেন কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে জোটের কথা ভাবছে না? উত্তরপ্রদেশের এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘বিএসপি-র সঙ্গে জোটের প্রশ্নই নেই। কারণ মায়াবতী বিজেপির বি-টিম। আর অখিলেশ যাদবের সঙ্গে এখন জোটের কথা বলতে গেলে, অখিলেশ ৪০৩টি আসনের বিধানসভায় ৪০টি আসনও কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি হবেন কি না সন্দেহ।’’ অখিলেশ আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, এসপি শুধু ছোট দলের সঙ্গেই জোট করবে। অন্য দিকে মায়াবতী জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি একাই ভোটে লড়বেন। ফলে এখন কংগ্রেস নিজে জোটের কথা বলতে গেলে দর কষাকষি করতেই সমস্যা হবে বলে দলের নেতাদের মত।
২০২২-এর গোড়ায় পঞ্জাব, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, গোয়াতেও নির্বাচন। এর মধ্যে পঞ্জাবে কংগ্রেস ক্ষমতায়। বাকিগুলিতে বিজেপি। কংগ্রেসের চিন্তা বাড়িয়ে জনমত সমীক্ষা জানিয়েছে, শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, গোয়া তিন রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায় ফিরছে। কংগ্রেসের জন্য আরও দুশ্চিন্তা হল, জনমত সমীক্ষা জানিয়েছে, পঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের পতন হতে পারে। সেখানে আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের তুলনায় বেশি আসন জিতবে।
সমীক্ষা সত্যি হলে সনিয়া-রাহুল গাঁধী যে ভাবে বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেই রাশও হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে কংগ্রেস নেতাদের আশঙ্কা। এআইসিসি-র এক সচিব বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করলেই উত্তরাখণ্ড, মণিপুরে জিততে পারি। কিন্তু আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা জিততে চাই কি না! সাধারণত আমরা নিজেরাই নিজেদের পরাজয় বেছে নিই! এখন যেমন পঞ্জাবে অকালি-বিজেপি জোট ভেঙে যাওয়ার পরেও কংগ্রেস নিজেই নিজেদের হারানোর সব রকম চেষ্টা করছে!’’
এআইসিসিতে পঞ্জাবের ভারপ্রাপ্ত নেতা হরিশ রাওয়ত উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অমরেন্দ্র সিংহ-নভজ্যোত সিংহ সিধুর বিবাদ সামলাতে গিয়ে তিনি নিজের ভোটমুখী রাজ্যেই নজর দিতে পারছেন না।