সংসদ ভবন। —নিজস্ব চিত্র।
মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’। একই বিষয়ে আলাদা করে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-ও। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে সংসদে কবে আলোচনা হবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্পিকার।বুধবার ‘ইন্ডিয়া’র হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। বিআরএসের হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন সাংসদ নামা নাগেশ্বর রাও। উল্লেখ্য যে, তেলঙ্গানার শাসকদল বিআরএস ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’য় অংশ নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে বহু বার বিজেপির বিরোধিতায় সরব হতে দেখা গিয়েছে তাদের।
বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও মোদী সরকারের কোনও সঙ্কট তৈরি হবে না। কারণ খাতায় কলমে ৩৩২ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে শাসক পক্ষের দিকে। বিরোধী দলগুলির অবশ্য বক্তব্য, মণিপুর নিয়ে সরকারের ‘নীরবতা’ ভাঙাতেই তারা সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এই প্রসঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক শিবসেনার তরফে বলা হয়েছে, মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী যাতে সংসদে আসেন, সেই কারণেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির উপর মানুষের আস্থা রয়েছে। বিরোধীরা আগেও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। কিন্তু মানুষ ওদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে।”
বুধবার সকালেই লোকসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। রাজ্যসভায় ২৬৭ নম্বর বিধি মোতাবেক নোটিস দিয়ে আলোচনার দাবি জানান আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা, আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা, ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা এবং কংগ্রেস সাংসদ রাজীব শুক্ল। মণিপুর নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে সংসদের বাদল অধিবেশনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে দফায় দফায় মুলতুবি হয়েছে রাজ্যসভা এবং লোকসভা।
গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। সম্প্রতি মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে সমাজমাধ্যমে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে তেতে রয়েছে জাতীয় রাজনীতি। ৭৮ দিন মৌনী থাকার পর মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ তবে তাতে ক্ষোভের প্রশমন যে ঘটেনি, তা বিরোধীদের বিক্ষোভেই স্পষ্ট। মণিপুরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সরব বিরোধীরা। এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই অচল সংসদের বাদল অধিবেশন।
গত সোমবার সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মণিপুর নিয়ে আলোচনা এবং প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। সরকার আলোচনায় রাজি বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তাঁরা এ-ও বলেন যে, বিরোধীরা আলোচনা চাইছেন না বলেই অধিবেশন ভেস্তে দিচ্ছেন। দুপুর আড়াইটেয় অধিবেশন শুরুর পর বিরোধী-বিক্ষোভ সামাল দিতে আসরে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনায় রাজি। বুঝতে পারছি না, বিরোধীরা কেন আলোচনা করতে চাইছেন না। মণিপুরের হিংসা নিয়ে দেশের মানুষের সত্য জানার অধিকার রয়েছে।’’ তবে শাহের মন্তব্যে বিরোধীদের বিক্ষোভ থামেনি। স্পিকার ওম বিড়লা জানান, ‘‘এই নিয়ে উত্তর দিলে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীই দেবেন।’’ মণিপুরে হিংসার ঘটনার সঙ্গে যে হেতু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি জড়িত, তাই এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে শাহই যা বলার বলবেন। বিরোধীরা সংসদের বাইরে রাতেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।