নীতীশ কুমার এবং মেওয়ালাল চৌধুরী— ফাইল চিত্র।
লালু পরিবারের ‘জঙ্গল রাজ’ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় দশক আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। নীতীশ কুমারের নয়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম দেখে কিন্তু অবাক অনেকেই। ১৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা ফৌজদারি মামলা। এর মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, হিংসায় উস্কানি-সহ নানা গুরুতর অভিযোগ।
বিহারে এনডিএ জোটের নয়া শিক্ষামন্ত্রী মেওয়ালাল চৌধুরীকে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। জামুই জেলার তারাপুর কেন্দ্রের দ্বিতীয় বারের জেডি(ইউ) বিধায়ক মেওয়ালাল ২০০৫-’১০ ভাগলপুরের বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিধি বহির্ভূত ভাবে কর্মী নিয়োগ করেন বলে অভিযোগ। মেওয়ালালের স্ত্রী নীতা ২০০৫-’১০ তারাপুরের জেডি(ইউ) বিধায়ক ছিলেন। গত বছর নিজের বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা যান তিনি। মেওয়ালালও ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন।
২০১৭ সালের গোড়ায় মেওয়ালালের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল বিজেপি। প্রাথমিক তদন্তের পরে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ (৪০৯), জালিয়াতি (৪২০), অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (১২০-বি)-সহ ভারতীয় দণ্ডিবিধির একাধিক ধারায় মামলাও রুজু হয়েছিল। সে সময় মেওয়ালালের গ্রেফতারির দাবিতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপির পরিষদীয় নেতা সুশীল মোদী।
নবনির্মীত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে ১৬৭ জন সহকারি অধ্যাপক এবং জুনিয়র সায়েন্টিস্ট নিয়োগের সেই মামলায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৫০-এরও বেশি। মেওয়ালালের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তিরও অভিযোগ উঠেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার নীতিশ মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ধনী মন্ত্রীও এই প্রাক্তন উপাচার্য। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১২ কোটি টাকারও বেশি।
দুর্নীতির মামলা দায়ের হওয়ার পর তৎকালীন জেডি(ইউ) বিধায়ক মেওয়ালালকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছিলেন নীতীশই। সে সময় গ্রেফতারি এড়াতে মেওয়ালাল গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু বেশি দিন সেই শাস্তি বহাল থাকেনি। এ বারের ভোটেও দলের টিকিট পেয়ে বিধায়ক হয়েছেন মেওয়ালাল। যদিও ওই মামলার তদন্ত এখনও চলছে।
মেওয়ালালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা্র প্রসঙ্গ তুলে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব টুইটারে লিখেছেন, ‘একজন পলাতক অপরাধীকে রাজ্যের মন্ত্রী করা হল’। আরেকটি টুইটে তাঁর মন্তব্য, ‘লালুজি যদি আজ বিজেপি-র সহযোগী হয়ে যেতেন, তবে তাঁকে ভারত রাজা হরিশচন্দ্র বলত। চারা ঘোটালা (পশুখাদ্য দুর্নীতি) এক মিনিটে ভাইচারা ঘোটালায় (সৌভ্রাতৃত্বে) বদলে যেত। লালুজির ডিএনএ নিয়েও প্রশ্ন উঠত না’।
আরও পড়ুন: সঙ্গিনীর খোঁজে ৩,০০০ কিলোমিটার পাড়ি মহারাষ্ট্রের ‘বিবাগী’ বাঘের
মেওয়ালাল অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি নির্দোষ। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় মামলার কথা জানিয়েছি। পুলিশ এখনও আমার বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি।’’
আরও পড়ুন: ২০৩০ সালে ব্রিটেনে নিষিদ্ধ পেট্রোল এবং ডিজেল গাড়ি, আজ ঘোষণা জনসনের
‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর) নামে একটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, বিহারের নয়া মন্ত্রীদের মধ্যে বিজেপি-র ৪, মেওয়ালাল-সহ জেডি(ইউ)-র ২ এবং হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা (হাম) আর বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি)-র একজন করে মন্ত্রী মামলায় অভিযুক্ত। এঁদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন জীবেশ মিশ্র, দরভঙ্গা জেলার জালে কেন্দ্রের এই বিধায়কের বিরুদ্ধে ৫টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৪টিই গুরুতর অপরাধের। ভিআইপি-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা নয়া মন্ত্রী মুকেশ সহনীর বিরুদ্ধেও রয়েছে ৫টি ফৌজদারি মামলা।