সংসদ চত্বরে প্রতিবাদ রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা-সহ ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতা-নেত্রীদের। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
এত দিন লোকসভায় বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এ বার সংসদ ভবনের বাইরের চত্বরে বিরোধীদের বিক্ষোভ নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। বিড়লার মতে, সংসদের পরিসরে যে ভাবে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে, তা সংসদীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর নাম না করে সমালোচনায় সরব হন স্পিকার।
অন্য দিকে, যে ভাবে আজ বেলা ১২টায় সংসদের অধিবেশনে সামান্য হট্টগোল হতেই সারা দিনের জন্য তা মুলতুবি করে দেওয়া হয়, তা দেখে বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বুঝতে পেরেই সংসদ থেকে পালাতে চাইছে বিজেপি। চলতি সপ্তাহের শেষে লোকসভায় ও আগামী সপ্তাহের গোড়ায় রাজ্যসভায় সংবিধানের ৭৫তম বর্ষপূর্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিজেপি জানে, সংবিধান নিয়ে আলোচনায় আদানি-মোদী সম্পর্কের বিষয়টি কৌশলে তুলবেন বিরোধীরা। তাই শেষ পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে আলোচনাও হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে বিরোধীরা।
সংসদ ভবন চত্বরে মোদী-আদানিকে নিয়ে লেখা স্টিকার, মোদী-আদানি মুখোশ পরে কংগ্রেসের প্রতিবাদ জানানোর কৌশলে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, সংসদের ভিতরে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে, টিভি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে কণ্ঠরোধ করা গেলেও, সংসদ চত্বরে কংগ্রেসের মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে সরব হওয়া আটকাতে ব্যর্থ শাসকেরা। তাই এ বার সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টায় স্পিকার তৎপর বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
আজ বেলা ১১টায় লোকসভা শুরুর পরেই আদানি প্রশ্নে কংগ্রেস আলোচনার দাবি জানালে স্পিকার ওম বিড়লা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে সংসদ চত্বরে যে ভাবে স্লোগান, পোস্টার, মুখোশের প্রয়োগ করা হচ্ছে তা অশোভন। আমাদের নিয়ম, সংসদীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী।’’ এরপরেই রাহুলের নাম না করে স্পিকার বলেন, ‘‘আমাকে আফশোসের সঙ্গে বলতে হচ্ছে (আন্দোলনে অংশ নেওয়া) বিপক্ষের শীর্ষ স্তরের নেতার আচরণ, ব্যবহার সংসদীয় মর্যাদার সঙ্গে খাপ খায় না।’’ তখন সরব হন কংগ্রেস নেতারা। পাল্টা হইচই শুরু করেন বিজেপি সাংসদেরা। লোকসভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার।
গত সপ্তাহে ফরাসি সংবাদসংস্থা মিডিয়াপার্ট-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, আমেরিকান ধনকুবের জর্জ সোরস ভারতে অস্থিরতা তৈরির জন্য অর্থ খরচ করছেন। সোরসের মদতে পুষ্ট ওসিসিআরপি সংবাদ সংস্থাই দাবি করেছিল, গৌতম আদানি ঘুষ দিয়ে বরাত আদায় করেছেন। যার ভিত্তিতে কংগ্রেস হইচই করছে। আজ সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জর্জ সোরস-গান্ধীদের সম্পর্ক নিয়ে লোকসভায় সরব হতে এতটাই উদ্গ্রীব ছিলেন যে, কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের বিল পেশের সময়ে তাঁকে থামিয়ে দেন তিনি। থতমত খেয়ে যান সর্বানন্দ। রিজিজুকে শেষে থামান স্পিকারের আসনে থাকা দিলীপ সইকিয়া। বসতে বাধ্য হন রিজিজু। সোনওয়ালের বিল পেশ হতেই ফের উঠে দাঁড়ান ও সোরসের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রিজিজুর প্রশ্ন, ‘‘দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে আপনাদের কী সম্পর্ক? এর জন্য আপনাদের উচিত সংসদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’ কংগ্রেস ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ জানালে দিনের মতো লোকসভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার।
রাজ্যসভাতেও প্রথম মুলতুবির পরে ১২টায় অধিবেশন শুরু হলে সোরস ও গান্ধী পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যসভার নেতা জেপি নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী নেতারা দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছেন। জর্জ সোরস ও কংগ্রেসের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে তা জানতে চাই।’’ আজ নড্ডা যখন ওই অভিযোগ করেন, তখন নিজের আসনে বসেছিলেন সনিয়া গান্ধী। পাল্টা জবাবে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। আদানি নিয়ে আলোচনা শুরু হোক। সেই বিতর্কে কংগ্রেস সব তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরবে।’’ আদানি প্রসঙ্গ উঠতেই হইচই শুরু করেন বিজেপি সাংসদেরা।অধিবেশন মুলতুবি করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়।