বিবিসির মুম্বইয়ের দফতরের বাইরে সংবাদমাধ্যমের ভিড়, ভিতরে তল্লাশি অভিযান আয়কর দফতরের। ছবি: রয়টার্স।
মঙ্গলবার সকালে জনা পনেরো আয়কর কর্মী হানা দেন বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বইয়ের কার্যালয়ে। তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ চালু হয়েছে মোদীর রাজত্বে। তাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারও রুদ্ধ হচ্ছে। বিজেপির পাল্টা দাবি, বিবিসি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ভ্রষ্ট বকওয়াস কর্পোরেশন’। এ সবের মধ্যেই বিবিসি তদন্তে সমস্ত রকম সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে।
সম্প্রতি বিবিসির একটি দু’পর্বের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। বিবিসির ওই তথ্যচিত্রকে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে কেন্দ্র তার সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। সমাজমাধ্যম থেকেও সরকারের ‘চাপে’ তুলে নেওয়া হয় তথ্যচিত্রটি। যদিও ডিজিটাল দুনিয়ায় এ ভাবে তথ্যচিত্রের প্রদর্শন ঠেকানো যায়নি। দেশের ছাত্রসমাজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা প্রদর্শনের ঢালাও ব্যবস্থা করে। বহু মানুষ সেই তথ্যচিত্রটি দেখেন। এ বার সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বিবিসির ভারতের দু’টি অফিসে আয়কর হানা চলল। তা নিয়ে নতুন করে দানা বেধেছে বিতর্ক। পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটর্স গিল্ডও।
বিজেপির দাবি, বিবিসি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা’। পাশাপাশি মোদী, শাহের দল এই প্রসঙ্গেই কটাক্ষে বিঁধেছেন কংগ্রেসকে। বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বলেন, ‘‘ভারতে যে সমস্ত সংস্থা বা সংগঠন কাজ করছে তাদের ভারতের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলতেই হবে। বিবিসি যদি সমস্ত আইন মানে তা হলে ভয় কিসের? বিবিসি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। বিবিসির কার্যপ্রণালীর সঙ্গে কংগ্রেসের খুব মিল।’’
আয়কর দফতরের অভিযান নিয়ে বার্তা এসেছে বিবিসির তরফেও। সংবাদমাধ্যমটি টুইট করে জানিয়েছে, তারা আয়কর দফতরের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছে। দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ারও আশা করছে সংস্থাটি।
যদিও ক্ষমতাসীন বিজেপিকে এ নিয়ে আক্রমণে কসুর করছেন না বিরোধী নেতানেত্রীরা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইটে বিবিসি অফিসের আয়কর অভিযান নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিবিসির অফিসে যে আয়কর হানা হয়েছে, তা নিয়ে কেউ কেউ বিস্মিত। কিন্তু বিস্ময়ের সত্যিই কি কোনও কারণ আছে?’’
একই সুরে সিপিএমের তরুণ সাংসদ জন ব্রিটাসের প্রশ্ন, ‘‘এটা কি সত্যিই প্রত্যাশিত ছিল না? ঋষি সুনক এ বার কী বলেন, তার দিকে তাকিয়ে আছি।’’ সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বমের টুইট, ‘‘বিবিসিতে হানা! ওরা এটাকে বলছেন সমীক্ষা! এই সমীক্ষা আসলে সত্যি গোপন করার মরিয়া চেষ্টা ভীতসন্ত্রস্ত সরকারের। গোটা বিশ্ব তা দেখছে। মোদী যখন জি-২০-এর সভাপতিত্ব করবেন, তখন কি তাঁকে ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে? তিনি কি সত্যি এর জবাব দিতে পারবেন?’’
সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের টুইট, ‘‘শাসন-প্রশাসন যখন অভয় এবং নির্ভয়ের জায়গায় ভয় এবং উৎপীড়নের প্রতীক হয়ে ওঠে, তখন বুঝবেন এর শেষ নিকটে চলে এসেছে।’’
দেশের দুই শহরে বিবিসির আয়কর হানার সমালোচনা করেছেন উদ্ধব শিবিরের শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত, পিডিপির মেহবুবা মুফতিও। সঞ্জয়ের অভিযোগ, বিবিসির অফিসে আয়কর হানার সময় নির্বাচনই বলে দিচ্ছে, গোটা বিশ্বে ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে কী বার্তা পৌঁছচ্ছে।
মোদীকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র নিয়ে ধুন্ধুমারের এক মাস পেরোতে না পেরোতেই যে ভাবে তাদের দফতরে আয়কর কর্তারা দলবেঁধে পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে বিরোধীদের মধ্যে। যদিও বিজেপি এতে অন্যায় কিছু দেখছে না। আয়কর দফতর সূত্রে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করা হয়েছে, একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ এবং তথ্য আয়কর দফতরের হাতে এসেছে। বিবিসির দফতরে অভিযান চালানো হয়নি। কেবল সমীক্ষা করতেই যাওয়া হয়েছিল। দিল্লি এবং মুম্বইয়ে কর্মরত বিবিসির সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের দাবি, তল্লাশি চলাকালীন তাঁদের ফোন এবং ল্যাপটপ জমা রাখা হয়েছিল। অফিস থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাওয়ারও আবেদন আয়কর কর্তারা তাঁদের কাছে করেছেন।