ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় দু’টি বিল পাশ হল মাত্র ১২ মিনিটে। রাজ্যসভায় মাত্র ৫৫ মিনিটে তিনটি বিল পাশ হয়ে গেল। পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে প্রথমে আলোচনার দাবিতে অনড় বিরোধীদের হইচইয়ের মধ্যে একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার ধারা আজও অব্যাহত রইল। আজ ছোট বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের জন্য আনা বিলও কার্যত কোনও আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে পাশ করিয়ে নিল। ব্যাঙ্ক লাটে উঠলে ৯০ দিনের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করতে আনা বিলও আজ রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল। কোনও আলোচনা ছাড়াই। তবে বিমা বেসরকারিকরণের বিল রাজ্যসভায় কার্যসূচিতে থাকলেও আজ সরকার তা পাশ করানোর চেষ্টা করেনি। বিরোধীরা জানিয়ে দিয়েছেন, বিমা বিল পাশ করানোর চেষ্টা হলে রাজ্যসভায় বড় রকমের গোলমাল হতে পারে।
পেগাসাস নজরদারি, কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না দেখে বিরোধী দলের সাংসদরা আজ অন্যান্য বিল নিয়ে আলোচনায় শামিল হয়ে কৌশলে পেগাসাস, কৃষি আইনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোফোন বন্ধ করে লোকসভা বা রাজ্যসভায় অন্য বক্তাকে ডাকা হয়েছে। রাজ্যসভায় এসপি-র রামগোপাল যাদব, আরজেডি-র মনোজ ঝা বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ, ব্যাঙ্কের আমানত সুরক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। রামগোপাল তৃণমূল সাংসদদের সাসপেন্ড করা নিয়েও আপত্তি তোলেন। সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেছেন, সরকারি সম্পত্তি বেচে কি পেগাসাস কেনার জন্য টাকা জোগাড় করা হচ্ছে? সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত আড়াই সপ্তাহ ধরে, বাদল অধিবেশনের গোড়া থেকেই লোকসভা, রাজ্যসভায় এই ‘লুকোচুরি’ চলছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, সংসদের দুই কক্ষে বিরোধীরা ওয়েলে নেমে হইচই করলেও তা লোকসভা বা রাজ্যসভা টিভি-র ক্যামেরায় দেখানো হচ্ছে না। বিরোধীরা পেগাসাস আড়ি পাতার বিরুদ্ধে ‘বিগ ব্রাদার ইজ় ওয়াচিং ইউ’, ‘স্টপ স্নুপিং অন মি’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্পিকার, চেয়ারম্যান বা মন্ত্রীদের সামনে ধরছেন। যাতে ক্যামেরার তা ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ রাজ্যসভা টিভিতে সংসদ থেকে সম্প্রচার কয়েক মিনিটের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। একে ‘রাজ্যসভা টিভির সেন্সরশিপ’ তকমা দিয়ে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, তৃণমূল সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিরোধী জোটের বিক্ষোভ ‘ব্ল্যাকআউট’ করা হল।
কোনও আলোচনা ছাড়াই মিনিটে মিনিটে বিল পাশ করানোকে ডেরেক ‘পাপড়ি চাট বিক্রির’ সঙ্গে তুলনা করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা গতকাল তার সমালোচনা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি আজ বলেন, ‘‘পাপড়ি চাটে সমস্যা থাকলে উনি মাছের ঝোল খেতে পারেন। কিন্তু সংসদকে মাছের বাজার বানাবেন না।’’ রাজ্যসভায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, সরকার কৃষকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে তৈরি। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর এ বিষয়ে বলতেও রাজি। কিন্তু বিরোধীরা ঘুরপথে কৃষকদের প্রসঙ্গ তুললেও, তা নিয়ে আলোচনায় আসতে চাইছেন না। কিন্তু আজ ১৮টি বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আগে পেগাসাস নিয়ে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। তারপরে কৃষি আইন ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।