Fuel Price Hike

LPG Price: গ্যাস নিয়ে বিরোধী তোপে কেন্দ্র

পেট্রোপণ্যের দাম লাগাতার বেড়েই চলেছে তাতে অস্বস্তিতে বিজেপি। দলের যুক্তি, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ক্রমশ জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ০৫:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের আট বছরে দ্বিগুণ বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। রান্নার গ্যাসে মোদী সরকার ভর্তুকি কার্যত তুলে দেওয়ায় হেঁশেলে আগুন দেশের মানুষের। এর জন্য বিজেপি যখন আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছে, তখন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ মোদী সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘‘বর্তমানে গ্যাসের যে দাম হয়েছে, তাতে ইউপিএ সরকারের আমলে দু’টি সিলিন্ডার কিনতে পারতেন দেশের মানুষ।’’ তাঁর দাবি, দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা যদি কোনও দল ভেবে থাকে, তা হলে তা একমাত্র কংগ্রেসই।

Advertisement

দু’বছর আগে করোনার লকডাউনের সময়েও ভর্তুকিযুক্ত রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৬০০ টাকার নীচে। তার পর থেকে লাগাতার দাম বেড়েই চলেছে। মাঝে পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য কয়েক মাস পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধি স্থগিত থাকলেও উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের পর থেকেই তা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলপ্রকাশের পরে গত ২২ মার্চ রান্নার গ্যাসের দাম পঞ্চাশ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার দেড় মাসের মাথায় ফের শুক্রবার রান্নার গ্যাসের দাম পঞ্চাশ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। এর ফলে রান্নার গ্যাসে কেন্দ্রের ভর্তুকির পরিমাণ কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে আনাজ— সকলেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেওয়া সরকারের ‘অসংবদেনশীল মনোভাব’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন বিরোধীরা। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবন ও জীবিকার উপরে প্রভাব ফেলছে। কোটি-কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য মূলত দায়ী হল পেট্রোপণ্যের ৭০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি।’’ সরকারের কাছে তাই অবিলম্বে পেট্রোপণ্যের উপরে সেস প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি করেছেন সিপিএমের ওই নেতা। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের মতে, ‘‘সরকারের ভুল আর্থিক নীতির কারণেই দেশের প্রতিটি পরিবারের আয় কমেছে। বেড়েছে বেকারত্ব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ বার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যপণ্য ও ওষুধের দাম বাড়তে চলেছে। কিন্তু সরকার নির্বিকার।’’

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আজ ইউপিএ জমানার সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনা করে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘২০১৪ সালে যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল, তখন গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১০ টাকা। সরকার ভর্তুকি দিত ৮২৭ টাকা। আজ ২০২২ সালে সেই সিলিন্ডারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৯৯ টাকা। সরকারের ভর্তুকি এসে দাঁড়িয়েছে শূন্যে। তখনকার দু’টি সিলিন্ডারের দামে এখন একটি সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে।’’

Advertisement

যে ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে ক্ষুব্ধ আমজনতা। আমআদমির সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সক্রিয় হয়েছেন রাহুল গান্ধী। গত কাল রাহুল বলেছিলেন, দেশের মানুষ চরম মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও খারাপ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ চালাচ্ছেন। আজ নিজেদের সরকারের সময়কালের সাফল্য তুলে ধরে রাহুল বলেন, ‘‘একমাত্র কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার গরিব ও মধ্যবিত্তের কথা ভাবে। কংগ্রেসে আর্থিক নীতির সেটাই হল মুখ্য ভিত্তি।’’ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সরকারের উচিত ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি বাড়ানো। যাতে আমজনতার সাশ্রয় হয়। তা না করে উল্টে পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি ক্রমশ কমিয়ে দেশের মানুষকে আরও সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে মোদী সরকার।

যে ভাবে পেট্রোপণ্যের দাম লাগাতার বেড়েই চলেছে তাতে অস্বস্তিতে বিজেপি শিবির। দলের যুক্তি, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ক্রমশ জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও। তাই সরকারকে নিরুপায় হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। যদিও যুদ্ধ শুরুর আগেই দফায় দফায় কেন পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছিল, তার জবাব দেয়নি তারা। এমনকি করোনা অতিমারির গোড়ার দিকে যখন বিশ্বজুড়ে পেট্রোপণ্যের দাম তলানিতে ঠেকেছিল, কেন তখনও এ দেশের সাধারণ মানুষকে তার সুবিধা না দিয়ে উল্টে দাম বাড়িয়ে সরকার কোষাগার ভরেছে, বিরোধীদের সে প্রশ্নের জবাবও মেলেনি বিজেপির তরফে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement