একজোট: কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মুম্বইয়ের কিসান মহাপঞ্চায়েতে। রবিবার। ছবি পিটিআই।
সংসদে কোনও বিল পেশ হলে সেই বিলের লক্ষ্য কী, কেন তা আনা হচ্ছে, তা বিলের ‘উদ্দেশ্য ও কারণ’ অংশে ব্যাখ্যা করা থাকে। সোমবার সংসদে মোদী সরকার তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য যে বিল পেশ করতে চলেছে, তার সিংহ ভাগ জুড়ে কৃষি আইনের উপকারিতাই বোঝানো রয়েছে। সরকার ফের দাবি করেছে, কৃষকদের উন্নতি, বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের জন্যই তিন কৃষি আইন আনা হয়েছিল।
তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার কেন তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করছে? বিলে সরকার বলছে, কৃষকদের একটা ছোট গোষ্ঠী কৃষি আইনের বিরোধিতা করছিল। সরকার চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে। উপকারিতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেশে স্বাধীনতার ৭৫-তম বর্ষ উদ্যাপন হচ্ছে। এই সময়ে বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবস্থান দেখে বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেই আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন। ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। তা হলে সরকার এখন আবার কৃষি আইনের উপকারিতার গান গাইছে কেন? না কি উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের জন্য আপাতত পিছিয়ে গিয়ে পরে আবার কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে আইন ফেরানোর কথা ভাবছে?
কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কৃষক সংগঠনগুলি যে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবি তুলছে, সেই একই দাবি তাঁরা সংসদের মধ্যেও তুলবেন। লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের গাড়িতে পিষে মারার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তের পিতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্ত-গ্রেফতারির দাবিও তোলা হবে।
কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির প্রশ্ন, “প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরেও একই কথা কেন? সরকার কৃষি আইন প্রত্যাহার বিলের ‘উদ্দেশ্য ও কারণে’ লিখছে, কৃষকদের একটা ছোট গোষ্ঠী বিরোধিতা করছিল। আন্দোলনের সময়ে যে ৭০০ জন কৃষক প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের বলিদানকে অপমান করা হচ্ছে।” সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, “আইনের পক্ষে নির্লজ্জ যুক্তি। অন্নদাতারা এই সব যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নির্বাচনের পরে আবার এই সব আইন ফিরিয়ে আনা হবে।” তাঁর অভিযোগ, সংসদে আলোচনা এড়িয়ে হাঙ্গামার মধ্যে বিল পাশ করানো হয়েছিল। সাংসদরা ভোটাধিকার চাওয়ায় তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল। চাষিদের কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। গাড়িতে পিষে মারা হয়েছে। তার পরেও সরকারের অনুশোচনা নেই!