দলিত নেতার বিরুদ্ধে দলিত নেত্রীকেই বেছে নিল বিরোধী শিবির। —ফাইল চিত্র।
লড়াই নিশ্চিত হয়ে গেল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। ১৬টি বিরোধী দলকে নিয়ে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিল কংগ্রেস। এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের বিরুদ্ধে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারকে প্রার্থী করল বিরোধী দলগুলি। নয়াদিল্লিতে আয়োজিত বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী নিজেই মীরা কুমারের নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদ মীরা কুমার ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পিকার ছিলেন। তিনিই ভারতীয় সংসদের প্রথম মহিলা স্পিকার। ফলে প্রার্থী হিসেবে তিনি গোটা দেশের কাছেই অত্যন্ত পরিচিত মুখ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর পিতৃপরিচয়। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে সবচেয়ে বড় মাপের দলিত নেতাদের অন্যতম তথা দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী জগজীবন রামের কন্যা মীরা দলিত মুখ হিসেবেও অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র দলিত প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের বিরুদ্ধে মীরা কুমারের চেয়ে উপযুক্ত নাম আর কিছু হতে পারত না বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করার জন্য সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলি যে এ দিন বৈঠকে বসবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। যে দলগুলি এত দিন ধরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী ঐক্যের কথা বলছিল, সেই দলগুলির মধ্যে নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ) ছাড়া অন্য প্রায় সব দলই এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিল। কংগ্রেসের তরফে সনিয়া গাঁধী ছাড়া ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, আহমেদ পটেল। ছিলেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, ডিএমকে নেত্রী কানিমোজি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা।
নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ)-কে ভাঙিয়ে নিয়ে বিরোধী শিবিরে বিজেপি ইতিমধ্যেই ধাক্কা দিয়েছে ঠিকই। তবু বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সনিয়ার নেতৃত্বাধীন বৈঠকের বহর খুব ছোট ছিল না। —ফাইল চিত্র।
এর আগে ২৬ মে-তেও বিরোধী দলগুলি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লিতে বৈঠক করেছিল। সেই বৈঠকে তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সপা সভাপতি অখিলেশ যাদব, বসপা সুপ্রিমো মায়াবতীরাও ছিলেন। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে তাঁদের দেখা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে। তাই তৃণমূলের তরফ থেকে ডেরেক ও’ব্রায়েন বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। অখিলেশ পাঠিয়েছিলেন কাকা রামগোপাল যাদবকে আর মায়াবতীর তরফে হাজির ছিলেন তাঁর প্রধান সেনাপতি সতীশ মিশ্র।
আরও পড়ুন: ধাক্কা নীতীশের, বিপাকে সনিয়া
এ ছাড়া আইইউএমএল, জেডি(এস), আরএসপি, জেএমএম, কেরল কংগ্রেস, এআইইউডিএফ এই বৈঠকে হাজির ছিল। বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের জাঠ কুলপতি তথা আরএলডি সুপ্রিমো অজিত সিংহও।
এনসিপি বা ডিএমকে কোভিন্দের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। কিন্তু সকাল থেকে দফায় দফায় আলোচনা, দৌত্য এবং বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধী শিবিরকে মোটের উপর ঐক্যবদ্ধ রাখতে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত সক্ষমই হয়েছে। মীরা কুমারকে প্রার্থী করার যে প্রস্তাব কংগ্রেসের তরফে দেওয়া হয়েছিল, কোনও দলই তা নিয়ে বিশেষ আপত্তি করেনি বলে খবর।