জয়রাম রমেশ। —ফাইল চিত্র।
মণিপুর নিয়ে রাজ্যসভায় একটি কথাও হল না, অথচ বাদল অধিবেশন প্রায় শেষ হতে চলল। এই দায় পুরোপুরি সরকারের দিকে ঠেলতে ও নিজেদের উদ্যোগকে তুলে ধরতে আজ নতুন চাল দিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। রাজ্যসভায় অচলাবস্থা কাটাতে এক ‘মধ্যপন্থা’র প্রস্তাব কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং প্রহ্লাদ জোশীকে দিয়েছে তারা।
রাজ্যসভার সমস্ত কাজ মুলতুবি রেখে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করার যে দাবি (২৬৭ ধারায়) বিরোধীরা লাগাতার করে এসেছেন, তা মেনে নিচ্ছে না কেন্দ্র। কিন্তু সরকার যে স্বল্পমেয়াদী আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে,তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে মণিপুরের উপর একটি প্রস্তাব এনে দিনভর আলোচনার (১৬৭ ধারায়) নতুন প্রস্তাব দিচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে পীযূষ জানিয়েছেন, তিনি ‘নীতিগতভাবে’ এই প্রস্তাবে সম্মত। কিন্তু এ-ও জানান যে, সময় বেশি নেই। সোমবার রাজ্যসভায় দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিল নিয়ে আলোচনা। মঙ্গলবার থেকে লোকসভায় ৩ দিন ধরে চলবে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা। শুক্রবার সংসদ শেষ। পরে অবশ্য অমিত শাহ রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে জানান, অধিবেশনের শেষ দিন মণিপুর নিয়ে আলোচনায় সময় দিতে পারবেন।
বিরোধীদের কৌশল, যদি সরকার সময় দিতে না পারে, তখন মণিপুর নিয়ে আলোচনা না-করার দায় সর্বতোভাবে তারা বিজেপির দিকে ঠেলে প্রচার করতে পারবে। আর আলোচনা হলে, বিরোধী সাংসদরা অন্তত কিছুটা বলার সুযোগ পাবেন, যা এত দিন কেন্দ্রের অনমনীয় মনোভাবের জন্য পাচ্ছেন না।
জয়রাম রমেশ আজ দুপুরে টুইট করে বলেন, ‘রাজ্যসভার অচলাবস্থা কাটাতে ইন্ডিয়া জোট রাজ্যসভার নেতাকে মধ্যপন্থার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চাই, কোনও বাধা ছাড়াই মণিপুর নিয়ে আলোচনা হোক। আশা করছি মোদী সরকার এতে রাজি হবে।’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ সকালে অধিবেশন চলাকালীনই বলেন, ‘সরকার পক্ষের কাছে আবেদন করছি, রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সূত্র খোঁজা হোক। এ ক্ষেত্রে কোনও ঔদ্ধত্য আমরা দেখাতে চাই না।’
বিরোধীরা দু’টি উদাহরণ সামনে নিয়ে এসেছেন। ২০০২ সালে এই ১৬৭ ধারাতেই গুজরাত দাঙ্গার পর দিনভর আলোচনা হয়, তাতে অংশ নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। এই প্রস্তাবটি এনেছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ অর্জুন সিংহ। অংশ নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহও। ২০১০ সালে ইউপিএ জমানায় একই ধারায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রস্তাব এনেছিলেন অরুণ জেটলি, তার পরে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খুলতেই হবে বলে শুরুতে যে দাবি সামনে রাখা হয়েছিল, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা নরম করল ‘ইন্ডিয়া’। এই মধ্যপন্থায় যে প্রস্তাবের কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যসভায় ওয়েলে নামলেই কড়া পদক্ষেপ করছেন চেয়ারম্যান ধনখড়। আপ-এর সঞ্জয় সিংহকে গোড়াতেই বরখাস্ত হয়ে বাইরে বসতে হচ্ছে। ফলে অস্ত্র শুধুমাত্র স্লোগান দেওয়া, নয়তো কক্ষত্যাগ। লাগাতার স্লোগান দিয়ে কিছুটা ক্লান্তও রাজ্যসভার বিরোধী বাহিনী। এ ছাড়া, কক্ষত্যাগের ফলে একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে সরকার।