‘ইন্ডিয়া’র দেশ জুড়ে ডাকা বিক্ষোভ সীমিত রইল দিল্লিতেই। ছবি: পিটিআই।
গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। সেখানে ঠিক হয়েছিল, সংসদের দুই কক্ষ থেকে বিরোধী সাংসদদের গণ সাসপেনশনের প্রতিবাদে শুক্রবার দেশ জুড়ে বিক্ষোভ হবে। কিন্তু সেই বিক্ষোভ সীমিত রইল দিল্লিতেই। দুপুর পর্যন্ত বিহার বাদ দিয়ে আর কোনও রাজ্যেই জোটের তেমন জমাট ছবি দেখা গেল না। ফলে আরও একবার প্রশ্ন উঠে গেল সর্বভারতীয় স্তরে জোট হলেও রাজ্য স্তরে কি তা আদৌ কার্যকরী? সার্বিক জোট কি হবে? নাকি রাজ্যে রাজ্যে শরিকেরা নিজেদের মতো করে জোট গড়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়বে?
কেন এমন হাল, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে জোরাল হল— কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের অন্য শরিকদের দূরত্ব এবং কংগ্রেসের অন্দরের নেতৃত্বহীনতা। জোটের একাধিক বৈঠক হয়ে গেলেও শরিকদের ভিতরে সম্পর্কের সুতো এখনও আলগা আলগাই রয়েছে। তার ভিত্তিতে কোনও সার্বিক রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করা কঠিন। একদা ভোটকুশলী এবং অধুনা রাজনীতিক প্রশান্ত কিশোরের যেমন অভিমত, ইন্ডিয়ার শরিকদলগুলি বা নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই খুব জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তাঁরা মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান। এটাই শরিকদের মধ্যে একমাত্র মতৈক্য। এ ছাড়া অন্য সমস্ত বিষয়েই সে ভাবে কোনও মতৈক্য তৈরি হতে পারেনি। আবার অনেকের মতে, বিরোধী শিবিরের প্রাচীনতম দল হিসেবে কংগ্রেসের অন্দরের ‘নেতৃত্বহীনতা’ও এর কারণ।
দিল্লির বিক্ষোভেও যে সব দলের প্রথম সারির নেতারা ছিলেন তেমন নয়। তবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী, সিপিএম সাধারণ সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআই (এমএল-লিবারেশন)-এর নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যেরা ছিলেন। তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম বেনজির নুরকে দেখা গিয়েছে মঞ্চে। কিন্তু ওই প্রতিবাদ সভার যে অভিঘাত তৈরি করার কথা ছিল, তা একেবারেই হয়নি। ভিড়ের নিরিখেও তা খুব ‘সন্তোষজনক’ পর্যায়ে পৌঁছয়নি। উপস্থিত নেতাদের বক্তৃতাও খুব আকর্ষণীয় ছিল না। রাহুলের বক্তৃতাও সেই পর্যায়ে পৌঁছয়নি। বক্তৃতায় রাহুল সংসদে রং-বাজি কাণ্ডে দায়ী করেন বিজেপিকেই। সংসদ থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের ধর্নায় লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপ রাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের নকল করেছিলেন। কল্যাণের নকলনবিশির ভিডিও নিজের মোবাইল-বন্দি করেছিলেন রাহুল। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শুক্রবার যন্তর মন্তরের বিক্ষোভ সভা থেকে রাহুল বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের একাংশ বেকারি নিয়ে কথা বলছে না, সংসদের নিরাপত্তা ভেঙে পড়া কিংবা সাংসদদের গণহারে সাসপেন্ড করা নিয়েও কথা বলছে না। কিন্তু আমি কেন ভিডিয়ো তুলেছি, সেই প্রশ্ন তুলছে।’’
‘ইন্ডিয়া’র গত বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল লোকসভার লক্ষ্যে আসন বোঝাপড়া এবং বেশির ভাগ আসনে একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় লড়াই করা। তৃণমূলের তরফে সেখানে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসনরফা চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। আর দেরি করা যাবে না। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপালেরা বলেছেন, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আদৌ তা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও জোট শরিকদের অনেকেরই সংশয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৈঠকে তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকের তরফে জানানো হয়েছিল, তাদের রাজ্যে ২২ ডিসেম্বর বিক্ষোভ করা যাবে না। কারণ, ওইদিন তামিলনাড়ুর রাজ্য দিবস। তা ছাড়া রাজ্যের বৃহদাংশে বন্যা পরিস্থিতিও রয়েছে। কিন্তু বাকি রাজ্যে কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। বাংলাতেও এক সঙ্গে ইন্ডিয়াভুক্ত দলগুলিকে শুক্রবার পথে নামতে দেখা যায়নি। তবে তার সুযোগও খুব একটা নেই। কারণ, এ রাজ্যে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস যৌথ কর্মসূচি করবে, এমন ভাবাটাই বাতুলতা! বামেরা পৃথক ভাবে শনিবার বাংলায় কর্মসূচি করবে বলে ঠিক করেছে। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এক দিন একটি কর্মসূচিই যখন সারা দেশে বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না, তখন লোকসভায় সার্বিক জোটের সম্ভাবনা কতটা?