থানাতেই খাটিয়া পেতে ধর্নায় যশবন্ত। আকোলায়। ছবি: টুইটার
যশবন্ত সিন্হা, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, অরুণ শৌরি ও শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো নেতাদের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর ‘অবজ্ঞা’কে বরাবরই হাতিয়ার করে এসেছে বিরোধীরা। যশবন্ত সিন্হার মতো নেতাকে লক আপে ঢুকিয়ে বিরোধীদের আরও বলার সুযোগ করে দিল বিজেপি। এমনকী, বিজেপি শরিক সংযুক্ত জনতা দলের মুখপাত্র পবন বর্মাও বলছেন, ‘‘এটা খুবই চিন্তার যে যশবন্ত সিন্হার মতো নেতাকে বিজেপি সরকারের নির্দেশেই আটক করা হল! তা-ও কি না
বিদর্ভের চাষিদের হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন বলে।’’
গুজরাতে ভোটের মুখে দলকে চাপে ফেলা এই আন্দোলন নিয়ে যশবন্ত নিজে কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, এর মধ্যে দলীয় রাজনীতি নেই। তিনি কৃষকদের সমস্যা দূর করতেই এই পথ নিয়েছেন। তাঁর দলের লোকেরা কিন্তু ঘরোয়া মহলে কবুল করছেন, এই আন্দোলন দলে দীর্ঘ অবজ্ঞার জবাব। অটলবিহারী বাজপেয়ী আমলের এই অর্থমন্ত্রী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েই মোদীর গরিব ও কৃষকের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টাকে ভাল রকম ধাক্কা দিতে চান। তা-ও মোক্ষম সময়ে, যখন মোদী নিজ-রাজ্যের ফেলে আসা কুর্সি দলের দখলে রাখতে মরিয়া। যখন, হিন্দু ভোটে থাবা বসাচ্ছে কংগ্রেস। পরের পর সমীক্ষায় তাদের ভাল ফলের আশা ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছে।
সোমবার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশে দাঁড়িয়ে বিদর্ভের চাষিদের প্রতি মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন ৭৯ বছর বয়সি নেতা। তুলো ও সয়াবিন চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়া কয়েকশো কৃষককে নিয়ে সোমবার আকোলায় জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তিনি। দাবি ছিল, কীটপতঙ্গের হানায় নষ্ট হওয়া শস্যের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সমস্ত শস্য কিনে নিতে হবে সরকারকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আকোলা পুলিশ আটক করে যশবন্তকে।
খবর ছড়াতেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করতে শুরু করেন বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন, ‘‘জানতে পেরেছি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা জেলে। ওঁর সঙ্গে দেখা করতে আমাদের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে পাঠাচ্ছি। উনি চাষিদের অধিকারের জন্য লড়ছেন। আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও টুইট করেন, ‘‘যশবন্ত সিন্হাকে আটক করা হল কেন? পাগলের মতো কাজ! দ্রুত ওঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক।’’
সোমবার রাত ৯টা ৫০ নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যশবন্তকে। কিন্তু থানা চত্বরেই ধর্নায় বসে যান তিনি। রাতে খোলা আকাশের নীচে খাটিয়াতেই ঘুমোন তিনি। সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুলিশ ছেড়ে দিলেও এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নড়ানো যাবে না।’’
কিন্তু তাঁরই দল তো ক্ষমতায় রয়েছে! বিজেপির প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, দল বা মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি তাঁর। যশবন্ত বলেন, ‘‘উনি আমার সঙ্গে কথা বলতে আসেননি, আমিও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করিনি।’’