‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে চলেছে মঙ্গলবার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি কার্যকরের পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে চলেছে মঙ্গলবার। লোকসভায় পেশ করা হবে এ সংক্রান্ত বিল। সোমবার কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজেপি-সহ শাসকজোট এনডিএর সাংসদদের মঙ্গলবার সভায় হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মাঝেই গত ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট অনুমোদিত হয়েছিল। ‘এক দেশ এক ভোট’ কার্যকরের দিশানির্দেশিকা খুঁজতে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছিল মোদী সরকার। লোকসভা ভোটের আগেই গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সব ক’টি বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল কোবিন্দ কমিটি। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কমিটির অন্য সদস্যেরা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, বিভিন্ন মঞ্চে আলোচনার পরেই কোবিন্দ কমিটির রিপোর্ট অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত ছিল, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মতামত নিয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ। বিশেষত বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে লোকসভার ‘ঢেউয়ে’ বিধানসভাগুলি ‘ভেসে যাবে’।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়, সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা রয়েছে, বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিজেপির অঙ্ক হল, শুধু লোকসভা ভোট হলে বিরোধী দলগুলির পক্ষে আসন সমঝোতা করা সহজ হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট জুড়ে দিতে পারলে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলির বিরোধ অনিবার্য। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে হেঁটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তা ছাড়া, ‘এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর পরে কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে কী হবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার পক্ষে মোদী সরকারের যুক্তি হল, এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। একটি ভোটার তালিকাতেই দু’টি নির্বাচন হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজের চাপ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বার বার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের যুক্তি। প্রস্তাবিত বিলে ২০২৯ সালের পরে পর্যায়ক্রমে এই পদ্ধতি কার্যকরের কথা বলা হয়েছে বলে সরকারের একটি সূত্রের খবর।