ভাল ইংরেজি বলতে না পারার জন্য তাঁকে নিয়ে কম মশকরা করেনি কলেজের সহপাঠীরা। কিন্তু সেই অপমান সহ্য করেও নিজের উদ্দেশ্যসাধনে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। আজ তিনি দেশের এক জন আইএএস আধিকারিক।
সুরভি গৌতম। মধ্যপ্রদেশের সতনার ছোট গ্রাম আমদরাতে জন্ম। বাবা আইনজীবী, মা শিক্ষিকা।
অত্যন্ত মেধাবী সুরভি শৈশব থেকেই স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মতোই গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন সুরভি।
দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। এবং স্কুল ব্যতীত কারও কোনও সাহায্য ছাড়াই।
স্কুলের পড়া শেষে ভোপালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন সুরভি। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনার জন্য ইংরেজিতে কথা বলার ক্ষেত্রে খুব একটা সাবলীল ছিলেন না তিনি। ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়েটি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঢুকলেন, সমস্যা তৈরি হল সেখানে।
সাবলীল ইংরেজি বলতে না পারায় কলেজে বিভিন্ন সময়ে কটাক্ষের শিকার হন সুরভি। কিন্তু তার পরেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। নিজের সাফল্য দিয়েই সেই সব নিন্দকদের মুখের উপর সপাটে জবাব দিয়েছেন সতনার এই মেয়ে।
সুরভি জানিয়েছেন, সাবলীল ইংরেজি বলতে না পারার জন্য যে হেনস্থা তাঁকে হতে হয়েছে সেই হেনস্থাই তাঁকে ইংরেজিতে সাবলীল ভাবে কথা বলতে শিখিয়েছে। প্রতি দিন ১০টি নতুন ইংরেজি শব্দ করায়ত্ত করতে থাকেন। ধীরে ধীরে বিদেশি ভাষাকে নিজের দখলে নিয়ে আসেন।
কলেজে পড়ার সময় টিসিএসে চাকরি পান। কিন্তু সেই চাকরি তিনি করেননি। ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
পরমাণু বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুরভি। গেট, ইসরো, সেল, এমপিপিএসসি, পিসিএস, এসএসি সিজিএল, দিল্লি পুলিশ এবং এফসিআইয়ের পরীক্ষাতেও পাশ করেছিলেন সুরভি।
২০১৩ সালে আইইএস পরীক্ষায় সুরভি সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন।
২০১৬ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন সুরভি। সারা দেশের মধ্যে তাঁর র্যাঙ্ক হয় ৫০। এক সাক্ষাৎকারে সুরভি বলেন, “লক্ষ্য যদি স্থির থাকে, কোনও ভাষাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। একটা সময় সেই ভাষাকে করায়ত্ত করা যায়।”
বর্তমানে গুজরাতের আমদাবাদের বিরামগাম জেলায় সহকারী জেলাশাসক হিসাবে কর্মরত।