ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদের পরে এ বার দিল্লিতে বন্ধ হচ্ছে মাংস দোকান। ফাইল চিত্র।
ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদের পরে এ বার দিল্লি।
চৈত্র নবরাত্রি উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার পরে রাজধানী দিল্লির বিজেপি শাসিত দক্ষিণ ও পূর্ব পুরসভা এলাকায় মাংসের দোকান বন্ধ রাখার ফরমান জারি করা হল। পুরসভার বক্তব্য, মন্দিরে যাওয়ার পথে খোলা মাংসের দোকান, মাংসের দোকানের গন্ধ ভক্তদের কাছে অস্বস্তির। তাই ২-১১ এপ্রিল ওই দোকানগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। বাকি দুই পুরসভা ওই সিদ্ধান্ত নিলেও, পুরনো দিল্লির বিভিন্ন এলাকা যে পশ্চিম দিল্লি পুরসভার অন্তর্গত, তারা এখনও ওই সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে ফের প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মের নামে কি কারও খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করতে পারে পুরসভা বা স্থানীয় প্রশাসন?
বাড়িতে কী রান্না হবে, পুরসভা ও প্রশাসনের ওই ফরমান কার্যত তা ঠিক করে দিচ্ছে বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। শিবসেনা দলের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চর্তুবেদী দক্ষিণ দিল্লির মেয়রের উদ্দেশে টুইট করে বলেন, ‘‘এক জন নিরামিষাশী হিসেবে আমি কিন্তু অন্যের খাবারের পছন্দকে সব সময়েই শ্রদ্ধা করি। তাই অন্যের দোহাই দিয়ে নিজেদের কর্মসূচি চালানোর চেষ্টা বন্ধ করুন।’’ শিবসেনা সরব হলেও, সামনেই দিল্লিতে পুরভোট। তাই হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে এ প্রশ্নে নীরব আম আদমি পার্টি।
নবরাত্রির সময়ে উত্তর ভারতের বড় অংশের মানুষ মূলত নিরামিষ খান। পেঁয়াজ-রসুন, সাদা নুনও খান না। দীর্ঘ সময় ধরেই নবরাত্রির সময়ে আমিষ মাংসের দোকান বন্ধ রাখার জন্য দাবি তুলছিলেন নাগরিকদের একাংশ। তাই ২ এপ্রিল নবরাত্রি শুরু হতেই দিল্লি সংলগ্ন গাজিয়াবাদের মেয়র আশা শর্মা এলাকার সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেন। তবে ‘ফ্রোজ়ন’ মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আশার দাবি, ‘‘মন্দিরে যাওয়ার পথে মাংসের দোকান খোলা থাকলে ভক্তদের অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়। তাই স্বচ্ছতার স্বার্থে ও ভক্তদের কথা মাথায় রেখে ওই সিদ্ধান্ত।’’ ফরিদাবাদ প্রশাসন এক ধাপ এগিয়ে নবরাত্রি শুরু হওয়ার আগেই মাংসের দোকানে তালা ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি, রান্না করা মাংসের খাবার পরিবেশনেও পরোক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা সরকারের দেখাদেখি গতকাল প্রথমে দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা ও পরে আজ পূর্ব দিল্লি পুরসভাও মাংসের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ব্যবসা মার খাবে বলে মাংসের দোকানের ব্যবসায়ীরা সরব হলেও, পুরসভা সিদ্ধান্তে অনড়। দক্ষিণ দিল্লির মেয়র মুকেশ সূর্য এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘নবরাত্রির সময়ে দিল্লির ৯৯ শতাংশ বাড়িতে আমিষ তো দূরে থাক, পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার পর্যন্ত হয় না। তাই ওই সময়ে মাংসের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের জরিমানা করা হবে। অনেক দোকানি ছাঁট মাংস রাস্তায় ফেলে রাখেন। সে সব কারণেই ন’দিন মাংসের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা নবরাত্রির সময়ে সমস্ত মদের দোকান বন্ধ রাখার জন্যও কেজরীওয়ালের সরকারকে অনুরোধ করেছে।