ঐশী ঘোষ
আগামিকাল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখল করতে গত কয়েক বছর ধরেই মরিয়া বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। বামদের আঁতুড়ঘর জেএনইউয়ের ক্ষমতা ধরে রাখার দায় এ বার বঙ্গ তনয়া ঐশী ঘোষের কাঁধে। সম্মিলিত বাম জোটের প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এম ফিলের ছাত্রী, দুর্গাপুরের ঐশী। কাজটা কঠিন, বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তিনি। তবু ঐশীর কথায়, ‘‘আশা কেন রাখব না? অন্ধকারেই তো মশাল জ্বলে।’’
গত কাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছিল সভাপতি প্রার্থী পদের বিতর্ক। এ বারের লড়াই মূলত ত্রিমুখী। বাম জোটের প্রার্থী ঐশীর বিরুদ্ধে এবিভিপির মণীশ জানগির এবং দলিত সংগঠন বিরসা অম্বেডকর ফুলে স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএপিএসএ)-র জীতেন্দ্র সুনা। ঐশীদের দুশ্চিন্তা এই সংগঠনটিই। ওড়িশার নিয়মগিরির আদিবাসী ছাত্র জীতেন্দ্র যে ভাবে অসম থেকে কাশ্মীর, আদিবাসী থেকে মহিলাদের ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছেন, তাতে অনেকের ধারণা, তিনি বাম ভোটে ভাগ বসাবেন। ভোট ভাগাভাগিতে এবিভিপি-র প্রার্থী সুবিধে পেতে পারেন, এই আশঙ্কায় বাম জোট শুরু করেছে শেষ মুহূর্তের অঙ্ক কষা।
বামের দুর্গ বলে পরিচিত জেএনইউ বরাবরই সঙ্ঘ পরিবারের গলার কাঁটা। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এখানকার ছাত্র সংগঠন দখল করতে মরিয়া এবিভিপি। কিন্তু প্রতিবারই হেরেছে গেরুয়া শিবির। গত কাল বির্তকের সময় গেরুয়া শিবিরের মণীশ কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ-সহ একাধিক বিষয় তুলে বামেদের সমালোচনা করেন।
পাল্টা বক্তব্যে ঐশী টেনে আনেন সাম্প্রতিক আর্থিক মন্দা, কাজ খোয়ানোর বিষয়টি। সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘এখানে এবিভিপি-র কত জন বেকার সমর্থক রয়েছেন?’’ উপস্থিত পড়ুয়ারা প্রবল হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান তাঁকে। মোদী সরকারের কাশ্মীর নীতি থেকে সরকারি লাভজনক সংস্থার বেসরকারিকরণ— মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে ঐশী বলেন, ‘‘যে ভাবে পুঁজিবাদী শক্তিগুলি ক্ষমতা বিস্তার করছে, এর পর দেশের নাম রিলায়্যান্স-জিও ইন্ডিয়া হতে আর বেশি বাকি নেই!’’ ইউএপিএ আইনেরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উপাচার্যের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনি এখন রোমিলা থাপারের কাজের মূল্যায়ন করছেন! সেই সঙ্গেই বলেন, ‘‘এরা মুখে অম্বেডকরের নাম আওড়ায়, কিন্তু গিয়ে অম্বেডকরের মূর্তি ভাঙে আর ক্যাম্পাসে সাভারকরের মূর্তি বসায়!’’
আজ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যু দিন। দু’বছর আগে তাঁকে হত্যা করায় অভিযোগ ওঠে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠনের দিকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ঐশী বলেন, ‘‘এক দিকে গৌরী লঙ্কেশ থেকে কালবুর্গি, অন্য দিকে আখলাখ, জুনেইদ। এঁদের কোনও ভাবেই ভুলব না।’’ ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি। তাঁর বক্তৃতার শেষ দিকে এবিভিপি সমর্থকেরা প্রবল হইচই শুরু করেন। দু’পক্ষের মধ্যে সামান্য ধাক্কাধাক্কিও হয়। শুক্রবারের ভোটে সেই উত্তাপের ছায়া পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের একাংশের।