লালগড়ের ‘আগন্তুক’-কে গত বছর পিটিয়ে মেরেছিল কিছু গ্রামবাসী। কয়েক দিন আগে পিলিভিটে এক বাঘিনিকে পিটিয়ে মেরেছে জনতা। এই ধরনের হিংসা সত্ত্বেও গত চার বছরে দেশে ৭৪১টি বাঘ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে এ বারের বাঘশুমারি। সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ১২টি। আগের শুমারিতে উত্তরবঙ্গে তিনটি বাঘের কথা বলা হলেও এ বার ওই অঞ্চলকে ব্যাঘ্রশূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার, বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাঘশুমারির যে-রিপোর্ট প্রকাশ করেন, তাতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের শুমারি অনুযায়ী দেশে ২২২৬টি বাঘ ছিল। এ বারের শুমারিতে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২৯৬৭। বৃদ্ধির হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে সুন্দরবনে ৭৬টি বাঘ ছিল। এ বারের শুমারিতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮৮। বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬ শতাংশ। দেশে সব থেকে বেশি বাঘ আছে মধ্যপ্রদেশে (৫২৬), তার পরেই কর্নাটক (৫২৪)। আগের শুমারিতে তালিকায় এক নম্বরে ছিল কর্নাটকই।
আগের শুমারির থেকে ২৩টি বেড়ে অসমে রয়েছে ১৯০টি বাঘ। অরুণাচলে ২৯টি। অরুণাচলের প্রধান মুখ্য বনপাল এম সূর্যপ্রকাশের দাবি, ‘‘খুব কম এলাকায় সমীক্ষা চালানো হয়েছে। আরও বাঘ আছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। সেখানে সমীক্ষা করা যায়নি।’’ বাঘের
সংখ্যায় শূন্য পেয়েছে মিজোরাম। ছত্তীসগঢ়ে বাঘের সংখ্যা ৪৬ থেকে কমে হয়েছে ১৯।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক বলেন, ‘‘সুন্দরবনে বাঘ ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় বন দফতরের সঙ্গে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি (জেএফএমসি) ভাল কাজ করেছে। নাইলন জাল দিয়ে জঙ্গল ঘিরে দেওয়ায় বাঘ লোকালয়ে আসতে পারছে না। সুরক্ষাও বেড়েছে।’’ রাজ্য বন্যপ্রাণ পর্ষদের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডুর মতে, বাঘের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। নিবিড় হয়েছে টহলদারি।
আরও পডু়ন: উন্নাও: বিজেপি বিধায়কের নামে খুনের মামলা দায়ের
বন দফতরের খবর, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথ ভাবে বাঘশুমারি চালানো হয় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানে। বাঘ গোনার জন্য ক্যামেরা-ফাঁদ পাতার পাশাপাশি বাঘের মলমূত্র, পায়ের ছাপের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। বাঘ-বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘পায়ের ছাপ দিয়ে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা গণনা নির্ভুল হয় না। এ বার উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।’’
ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর ৪০% ভারতে। তবে কারও কারও প্রশ্ন, সুন্দরবনের বাঘ তো বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে। তা হলে এই সংখ্যা কি বিভ্রান্তিকর নয়?
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘‘বাঘ গুনতে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে যৌথ ভাবে ক্যামেরা লাগানো হয়। যাবতীয় নমুনা সংগ্রহ করে এ বার দেহরাদূনে ওয়ার্ল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় বাঘশুমারির পর্যালোচনা করা হয়। সে-ক্ষেত্রে একই বাঘ দু’দেশে দেখানো সম্ভব নয়।’’