স্বচ্ছতা নিয়ে প্রচারের ঢাক ফাঁসল তথ্যে

সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি কেমন সাফল্য পেয়েছে, এ বিষয়েই সমীক্ষা করেছে ন্যাশনাল স্ট্য়াটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও)।

Advertisement
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোটি কোটি টাকা খরচ করে মোদী সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানে কেমন কাজ হয়েছে? সমীক্ষা বলছে, কাজ হয়েছে ভালই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে দাবি করেছেন— দেশ ‘প্রকাশ্যে মলত্যাগ-মুক্ত’ হয়েছে, ৯৫ শতাংশ দেশবাসী শৌচাগার ব্যবহার করছেন, সরকারি সমীক্ষার রিপোর্টই তা খারিজ করে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠার পরে সংখ্যাতত্ত্ব ও পরিকল্পনা কমিশন বিবৃতি দিয়ে সোমবার বলেছে, এই প্রথম এমন সমীক্ষা করেছে সরকারি দফতরটি, যার তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ। তা ছাড়া সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ফের পাওয়ার লোভ থেকে অনেকে ইচ্ছা করে সমীক্ষকদের কাছে নেতিবাচক উত্তর দিতে পারেন। তার প্রভাব ফলাফলে পড়েছে।

Advertisement

সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি কেমন সাফল্য পেয়েছে, এ বিষয়েই সমীক্ষা করেছে ন্যাশনাল স্ট্য়াটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও)। শনিবার প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে— ৯৫ নয়, নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহার করেন ৭১ শতাংশ গ্রামীণ ভারতবাসী। ২০১৮-র ১ অক্টোবরকে ভিত্তিদিবস ধরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমীক্ষাটি করা হয়েছে। তার আগেই ১০০ শতাংশ শৌচাগার ব্যবহারের দাবি করে নিজেদের ‘প্রকাশ্যে মলত্যাগমুক্ত রাজ্য’ ঘোষণা করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান। সমীক্ষা চলাকালীন ওই ঘোষণা করে ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু।

এনএসও-র রিপোর্ট বলছে, ঝাড়খণ্ডের গ্রামের মানুষের ৪২ শতাংশই নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহার করেন না। তামিলনাড়ুতে ৩৭, রাজস্থানে ৩৪, কর্নাটকে, ৩০, মধ্যপ্রদেশে ২৯, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ২২ শতাংশ করে গ্রামীণ মানুষ নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পান না। ২০১৭-র অক্টোবরে, সবার আগে নিজেদের ‘প্রকাশ্যে মলত্যাগমুক্ত রাজ্য’ ঘোষণা করেছিল গুজরাত। এনএসও-র সমীক্ষা বলছে, মোদী-অমিত শাহের রাজ্যে প্রতি চার জন গ্রামবাসীর এক জন (২৫ শতাংশ)-ই নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সব মিলিয়ে গোটা দেশের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ৭১ শতাংশ গ্রামবাসী নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহার করেন। ২০১২-য় সর্বশেষ একটি সমীক্ষায় এই সংখ্যাটি ছিল ৪০ শতাংশ। সেই হিসেবে সরকারি প্রকল্প ‘স্বচ্ছ ভারত’-এ ভালই সাফল্য মিলেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ৯৫ শতাংশ সাফল্যের কথা বলছেন, তা নেহাতই কথার কথা।

Advertisement

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে বিরোধীরা সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছেন না। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইটে বলেছে, ‘মোদী সরকারের আরও একটি প্রচারের ফানুস ফেটে গিয়েছে। সরকার যখন দাবি করছে ৯৫ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ নিয়মিত শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পান, সরকারি সমীক্ষার তথ্য বলছে আসলে সেটা ৭১ শতাংশ। বিজেপি-শাসিত বহু রাজ্যে দাবি ও তথ্যে বড়সড় ব্যবধান।’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সোমবারই জল শক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথ ভাবে সংখ্যাতত্ত্ব ও নীতি প্রণয়ন মন্ত্রক যে বিবৃতিটি দিয়েছে, তাতে বেশ কয়েকটি অজুহাত খাড়া করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে মাথায় তুলে রাখতে মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনএসও-র সমীক্ষার ফলে ত্রুটি থাকতে পারে। কারণ ‘সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার লোভে’ অনেকেই সমীক্ষকদের কাছে নেতিবাচক উত্তর দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমীক্ষার রিপোর্টটি ব্যাখ্যা করার সময়ে এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। তা ছাড়া এই প্রথম এনএসও এমন সমীক্ষার কাজ করল। ভোটের আগে মোদী সরকার যখন কর্মসংস্থান নিয়ে সাফল্য প্রচার করছিল, ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে-র একটি সমীক্ষার রিপোর্ট জানায় বেকারত্বের হার সাড়ে তিন দশকের সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে। অভিযোগ, চাপ সৃষ্টি করে সেই রিপোর্ট প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয় সরকারি ওই সংস্থাকে। এ দিন মন্ত্রকের বিবৃতিও চাপে পড়ে কিনা— সেই প্রশ্ন উঠছে।

সংবাদ সংস্থা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement