China

ভুটানের ভূখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশ, রাস্তা-হেলিপ্যাড বানানোর অভিযোগ

অভিযোগ, গত ১৩ এবং ২৪ অগস্ট মধ্য সেক্টরের তোর্সা নালা (ডোলং চু) পেরিয়ে দক্ষিণ ডোকলামে ঢোকে চিনা ফৌজ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:০৮
Share:

চিন-ভুটান সীমান্তে অশান্তির মেঘ— ফাইল চিত্র।

লাদাখ এবং দক্ষিণ চিন সাগরের পরে এ বার ‘ড্রাগনের নজর’ ভুটান সীমান্তে! সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বেজিং-থিম্পু ২৫তম রাউন্ডের বৈঠক হতে পারে চলতি মাসে। তার আগেই চিন-ভুটান সীমান্তের মধ্য ও পশ্চিম সেক্টরে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ‘তৎপরতা’র খবর মিলেছে। এমনকি, ভুটানের ভুখণ্ডে চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের অভিযোগও সামনে এসেছে।

Advertisement

চলতি বছরের গোড়াতে ২৫তম রাউন্ডের বৈঠকের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জেরে তা পিছিয়ে গিয়েছিল। আসন্ন সীমান্ত বৈঠকের আগে লাল ফৌজের এই গতিবিধিতে উদ্বিগ্ন খিম্পু। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, বৈঠকের আগে ভুটানকে চাপে রাখতেই চিনের এই কৌশল। ২০১৭ সালে ডোকলাম মালভূমিতে ভারত ও চিনা সেনার টানা ৭৩ দিনের ‘স্ট্যান্ড অফ’ পর্বে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছিল ভুটান। তাই এ ক্ষেত্রে ভারতের বন্ধুরাষ্ট্রকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার মনোভাবও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিম সেক্টরের ৩১৮ বর্গ কিলোমিটার এবং মধ্য সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার ভুটান-ভূখণ্ড চিন দাবি করছে অনেক দিন ধরেই। ডোকলাম মালভূমির কিছু অংশও এর মধ্যে রয়েছে। ২০১৭ সালের পরেও সেখান থেকে চিনা ফৌজ সরেনি বলে অভিযোগ। সিকিম সীমান্ত লাগোয়া ভুটানের ওই ভূখণ্ডে ঢুকে চিনা ফৌজ নিয়মিত টহলদারি চালানোর পাশাপাশি সামরিক পরিকাঠামো বানিয়েছে বলেও ভারতীয় সেনা এবং রয়্যাল ভুটান আর্মি সূত্রের খবর।

Advertisement

ডোকলামের ঘটনার পরে পশ্চিম সেক্টরে ভুটানের পাঁচটি এলাকায় চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের খবর মিলেছে। এর মধ্যে চুম্বি উপত্যকার পূর্ব ভুটানের প্রায় ৪০ কিলোমিটার অন্দরে ঢুকে তারা রাস্তা এবং হেলিপ্যাড বানিয়েছে বলে অভিযোগ। ভুটানের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত ১৩ এবং ২৪ অগস্ট তোর্সা নালার মূল ধারা (ডোলং চু) পার হয়ে ভুটানে ঢোকে চিনা সেনা। এর পর তারা দক্ষিণ ডোকলামে রাজা-রানি হ্রদের তীর থেকে ভুটানি পশুপালকদের তাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: প্রথায় ব্যতিক্রম, হচ্ছে না সর্বদল বৈঠক, সোমবার শুরু বাদল অধিবেশন

চিনা বাহিনীর গতিবিধি দেখে ভারতীয় সেনার ধারণা, তারা ঝাম্ফেরি গিরিশিরার গিয়েমোচেন পর্যন্ত এলাকা নিজেদের কবজায় আনতে চাইছে। কিন্তু ভুটান ও ভারতের দাবি, সিচেন লা-বাটাং লা ট্রাইজংশনই তিন দেশের সীমানা নির্ধারক। ডোকলামের উত্তরে অনুপ্রবেশ করে চিনা বাহিনী ইতিমধ্যে পাহাড়ের উপর নজরদারি যন্ত্র বসিয়েছে বলেও অভিযোগ।

শুধু মধ্য বা পশ্চিম সেক্টর নয়, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) উত্তেজনার আবহেই পূর্ব সেক্টরে ভুটানের ভূখণ্ডে ‘নজর’ ঘুরিয়েছিল চিন। তবে সরাসরি সেনা ঢোকানো নয়, এ ক্ষেত্রে ভুটানের পূর্ব সেক্টরের সীমান্ত-লাগোয়া সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মালিকানার দাবি তোলা হয়েছিল সরাসরি আন্তর্জাতিক মঞ্চে। যদিও গত ২৯ জুন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি’ (জিইএফ)-এর সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল সভায় ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশ ভুটানের পাশে দাঁড়ানোয় চিনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি।

আরও পড়ুন: নিট পরীক্ষার্থীদের জন্য ছুটল মেট্রো, কাল থেকে চালু সবার জন্য

ওই ঘটনার পরে সাকতেং অভয়ারণ্য ভুটানের ত্রাশিগাং জেলার অংশ কি না, সে বিষয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছিল চিন। পূর্ব ভুটানের ওই অভয়ারণ্যের পাশেই অরুণাচল প্রদেশ। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ভারতের। আমেরিকা-স্থিত জিইএফ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মসূচিতে আর্থিক সাহায্য করে থাকে। চিন-ভুটান সীমান্তের পূর্ব সেক্টরে অবস্থিত ৭৪০ বর্গ কিলোমিটারের সাকতেং অভয়ারণ্যও সেই তালিকায় রয়েছে। কিন্তু ২৯ জুন জিইএফ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে চিনের প্রতিনিধি ওই অভয়ারণ্যের উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র রক্ষার জন্য ভুটানকে অনুদান দেওয়ার বিরোধিতা করেন। তাঁর যুক্তি, ওই অভয়ারণ্যের মালিকানা ভুটানের নয়, ওটি বিতর্কিত অঞ্চল।

বৈঠকে উপস্থিত ভারতের প্রতিনিধি অপর্ণা সুব্রমণি সরাসরি চিনের দাবির বিরোধিতা করেন। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের প্রতিনিধিরাও বেজিংয়ের আপত্তিতে সায় দেননি। এই পরিস্থিতিতে সাকতেং সংরক্ষণ প্রকল্পের (প্রজেক্ট নম্বর ১০৫৬১) জন্য ভুটানের অনুদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন জিইএফ কর্তৃপক্ষ।

সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ১৯৮৪ সাল থেকে বেজিং-থিম্পু ২৪ রাউন্ড বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মধ্য ও পশ্চিম সেক্টরে সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে মতভেদ থাকলেও আগের কোনও বৈঠকেই পূর্ব সেক্টরের কোথাও সমস্যা দেখা দেয়নি। ফলে সাকতেং অভয়ারণ্য নিয়ে চিনা আপত্তি পুরো বিষয়টিকে নয়া মাত্রা দেয়। প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, মধ্য সেক্টরে ভুটানকে ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দিয়ে বিনিময়ে পশ্চিম সেক্টরে ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চেয়েছে চিন। অভিযোগ, সিকিমের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতকে চাপে রাখতেই বেজিংয়ের এই কৌশল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement