বিরোধিতার এক সুরের আশঙ্কায় মোদী সরকার

দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজয়রথের চাকা বসে যাওয়ায় মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কার হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিল। সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা এক যোগে কেন্দ্রকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করবেন বলে আশঙ্কা বিজেপি শিবিরে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজয়রথের চাকা বসে যাওয়ায় মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কার হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিল। সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা এক যোগে কেন্দ্রকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করবেন বলে আশঙ্কা বিজেপি শিবিরে।

Advertisement

অরবিন্দ কেজরীবালের জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার থেকে প্রকাশ কারাট সকলেই উজ্জীবিত। এমন নয় যে অরবিন্দ কেজরীবালকে সামনে রেখে তাঁরা এখনই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিকল্প জোট গড়তে চাইছেন। কিন্তু আঞ্চলিক দলের নেতারা মনে করছেন, দিল্লির নির্বাচন বুঝিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপি আর অপ্রতিরোধ্য নয়। দিল্লির হার মোদী সরকারকে জনমুখী নীতি নিতে বাধ্য করবে। যার অর্থ, শীতকালীন অধিবেশনের মতো আগামী বাজেট অধিবেশনেও বাম-তৃণমূল-জেডিইউ-সহ আঞ্চলিক দলগুলি মিলে নতুন উদ্যমে মোদীর সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

লোকসভায় বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রাজ্যসভায় বিজেপি তথা এনডিএ জোট এখনও সংখ্যালঘু। একের পর এক রাজ্যে বিধানসভায় আসন বাড়িয়ে, সেই সমীকরণ পাল্টাতে চাইছে বিজেপি। দিল্লির আগে পর্যন্ত, লোকসভা ভোটের পর চারটি বিধানসভা নির্বাচনেই মোদী-ঝড় অব্যাহত ছিল। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, তিন রাজ্যেই সরকারে এসেছে মোদী। জম্মু-কাশ্মীরেও বিজেপি সরকার গঠনের অন্যতম দাবিদার। চলতি বছরের শেষে বিহারে ভোট, তার পরে আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির সেটাই লক্ষ্য। কিন্তু এখন দিল্লিতেই মোদী-ঝড় আটকে গেল।

Advertisement

সংসদে বাধা পেয়েই জমি অধিগ্রহণ আইনের সরলীকরণ, বিমায় বিদেশি লগ্নি দরজা খুলতে অর্ডিন্যান্স আনতে হয়েছিল মোদী সরকারকে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স দেখিয়ে যে বিনিয়োগ আনা যাবে না, মোদী-অরুণ জেটলি তা বুঝতে পারছেন। কারণ শিল্পমহল, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চান পাকাপোক্ত আইন। নীতির স্থায়িত্ব। তাই আগামী বাজেট অধিবেশনে ফের এই অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়ে সংস্কারকে আইনের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করবে মোদী সরকার। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় বাধা জমি অধিগ্রহণ। রাজ্যসভার সমর্থন না থাকলে ওই অর্ডিন্যান্স পাশ করানো সম্ভব নয়। কিন্তু বিরোধীরা যে এককাট্টা হচ্ছেন, তা জানিয়ে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সব বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে কৌশল ঠিক হবে।”

বিজেপির একাংশের মতে, মোদী সরকারের সংস্কারের চেষ্টায় শহুরে মধ্যবিত্ত বা ভিন্ রাজ্যের গরিব শ্রমিক, কোনও শিবিরেরই মন জয় করা যায়নি। ভোটের ফলেই তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দিল্লির ভোটের হার দেখে মোদী সরকার যদি সংস্কারের প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তা হলে ভুল হবে। দিল্লির ভোটের আগে মমতা, প্রকাশ কারাটরা অরবিন্দ কেজরীবালকে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁদের সমর্থকদের ডাক দিয়েছিলেন। দিল্লিতে তাঁদের ভোটের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও, কেজরীবালের জয়ে যে আঞ্চলিক দলের নেতারা উজ্জীবিত, তা আজ মমতা-নীতীশ নিজেরাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কেজরীবালের জয়ের থেকেও তাঁদের বেশি আনন্দ অবশ্য বিজেপির হারে। কেজরীবালকে অভিনন্দন জানিয়ে মমতা টুইট করেছেন, “যারা উদ্ধত, প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে, তাদের জন্য এটা বড় হার।” আবার আজই রামপুরহাটের প্রশাসনিক সভায় তিনি বলেছেন, “এই ঔদ্ধত্য মানুষ মেনে নেয় না।” একই সুরে নীতীশ কুমার বলেছেন, “মানুষ ন্যায় ও উন্নয়ন চায়। তারা ঔদ্ধত্য সহ্য করে না। দিল্লিতে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে।”

লোকসভা ভোটের আগে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলগুলিকে একজোট করে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মঞ্চ তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য আপ ছিল না। উদ্যোক্তা ছিলেন বামেরা। দিল্লির ভোটের পর আপকে নিয়ে সেই মঞ্চ তৈরির চেষ্টা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। আঞ্চলিক দলের নেতারা মনে করছেন, কেজরীবাল এখনই উৎসাহিত হবেন না। কিন্তু সকলেই একসুরে মোদী বিরোধিতায় সমস্যা হবে না। ডেরেক বলেন, “গত ছ’সাত মাস ধরেই আপের সঙ্গে তৃণমূল সমন্বয় রাখছে।” নীতীশ কুমারও জানান, তাঁকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা। কেজরীবালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও।

বিরোধীদের এক সুরের সম্ভাবনাতেই চিন্তায় কেন্দ্র।

নীতীশের তোপ

নরেন্দ্র মোদী শিবিরকে নিশানা করার অস্ত্র নীতীশ কুমারের হাতে তুলে দিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল! দিল্লিতে বিজেপি খড়কুটো হয়ে উড়ে যাওয়ার পর জেডিইউ শীর্ষ নেতা বললেন, “এ বার বিহারের জনতার কাছ থেকেও ওঁরা এমন জবাব পাবেন।” বিধায়ক কেনাবেচার জন্য জিতনরাম নয়াদিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছেন বলে অভিযোগ নীতীশের। রাজ্যপালের কাছ থেকে সরকার গঠনের দাবি নিয়ে সাড়া মেলেনি। তাই সমর্থক ১৩০ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লি এসেছেন নীতীশ। বুধবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement