দুর্ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ছবি: টুইটার।
বিহারের বক্সার জেলায় দুর্ঘটনার কবলে এক্সপ্রেস ট্রেন। বক্সারের রঘুনাথপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছে ১২৫০৬ ডাউন নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের ছ’টি বগি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রেলের আধিকারিকরা। এই দুর্ঘটনার ফলে ওই লাইনে আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বাতিল করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে বহু ট্রেনের। এখনও পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বক্সারের ডুমরাওয়ের মহকুমাশাসক কুমার পঙ্কজ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “উদ্ধারকাজ চলছে। রাত দেড়টা পর্যন্ত চার জন মারা গিয়েছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহত শতাধিক।” যদিও রেলের তরফ থেকে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। রাত দু’টো নাগাদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানান, উদ্ধারকাজ শেষ। সব বগি খতিয়ে দেখা হয়েছে। যাত্রীদের শীঘ্রই একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া হবে। রাত আড়াইটে নাগাদ রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেন রেলমন্ত্রী। তিনি লেখেন, “অপূরণীয় ক্ষতির জন্য গভীর সমবেদনা। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার মূল কারণ আমরা খুঁজে বার করব।” দুর্ঘটনাগ্রস্থ ১২৫০৬ ডাউন নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রীদের অন্য ট্রেনে বসানো হয়েছে এবং রেলের তরফ থেকে তাঁদের জন্য খাবার ও জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রেল সূত্র খবর, রাত পৌনে ১০টা নাগাদ বিহারের বক্সার জেলার রঘুনাথপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত ট্রেনটির ছ’টি বগি। ট্রেনটি দিল্লির আনন্দ বিহার থেকে কামাক্ষ্যার দিকে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার খবর জানা জানি হতেই ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। এসে পৌঁছয় জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রেলের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনার পরেই হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে রেলের তরফ থেকে—
পটনা হেল্পলাইন- ৯৭৭১৪৪৯৯৭১
দানাপুর হেল্পলাইন- ৮৯০৫৬৯৭৪৯৩
কম কন্ট্রোল- ৭৭৫৯০৭০০০৪
আরা হেল্পলাইন- ৮৩০৬১৮২৫৪২
লাইনচ্যুত নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের সম্পর্কে আরও কোনও খবর পেতে দানাপুর কন্ট্রোল রুমের এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করা যেতে পারে-
০৬১১৫-২৩২৪৯০
০৬১১৫-২৩২৪৯২
০৬১১৫-২৩২৪৯৬
০৬১১৫-২৩২৪৯৮
দুর্ঘটনা নিয়ে রাত ১টা নাগাদ টুইট করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি লিখেছেন, “বক্সারে যেখানো ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার অভিযান চলছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, জেলা প্রশাসন, রেলের আধিকারিক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই একজোট হয়ে কাজ করছে। আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।ওয়ার রুম খুলে সমস্ত বিষয়টির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।”
পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “দিল্লি-কামাখ্যা নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেস বিহারের বক্সার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়, বুধবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ। ছ’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। হতাহতের কোনও খবর এখনও নেই। রেলকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছেন। আপাতত ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।”
দানাপুর ডিভিশনের ডিআরএম জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে রঘুনাথপুর স্টেশনের কাছে নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের ছ’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।”
খবর পাওয়ার পরেই দুর্ঘটনাস্থলে প্রশাসনের আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধারকাজে সমস্ত রকম সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, টুইট করে জানিয়েছেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব।
এই দুর্ঘটনার উপর নজর রাখছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। নিজের এক্স (পূর্বতর টুইটারে) হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, “আনন্দ বিহার থেকে কামাখ্যাগামী ১২৫০৬ নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
রাত ২টো ৫ মিনিটে আনন্দবাজার অনলাইনকে পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “উদ্ধার করে সকলকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গিয়েছেন কি না আমরা খতিয়ে দেখছি। এখনই আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়, কেউ মারা গিয়েছেন কি না! তবে সব মিলিয়ে ৬০ জন আহত হয়েছেন। হাসপাতালের তথ্য পেলেই আমরা আপনাদের জানিয়ে দেব।”