জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুম শেষ হলেই শুরু হবে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের পর্ব। আর এই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পকে নিয়ে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’র সূচনা করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে কংগ্রেসের অভিযোগের পর নির্বাচন কমিশন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গাউবাকে চিঠি লিখে নির্দেশ দিয়েছে, ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই যাত্রা করা চলবে না। এই প্রচার কর্মসূচির জন্য ‘জেলা রথ পরিচালক’ নিয়োগের প্রক্রিয়াও ওই পাঁচ রাজ্যে আটকে দিয়েছে কমিশন। নাগাল্যান্ডের তাপী কেন্দ্রে উপনির্বাচন থাকায় সেখানেও কমিশনের নির্দেশ কার্যকর করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
১৫ নভেম্বর থেকে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’র কর্মসূচি শুরু হবে। যা চলবে পরের বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং তারপরে লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই যাত্রার দিনক্ষণ স্থির করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আজ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই কর্মসূচির জন্য একজন সরকারি আধিকারিককে ‘জেলা রথ পরিচালক’ হিসেবে নিয়োগ করার চেষ্টা চলছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রকের এই সংক্রান্ত চিঠির বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ, যে সব এলাকায় ভোটের আচরণবিধি লাগু রয়েছে, সেখানে এই যাত্রা করা চলবে না। এর পরে সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব অপূর্ব চন্দ্র জানিয়েছেন, ভোটমুখী রাজ্যগুলিকে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’র কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’র মাধ্যমে লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুফলকে তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর। বিরসা মুন্ডার জন্মদিন— জনজাতি গৌবর দিবসে এই যাত্রা শুরু করবেন মোদী। সেদিন থেকে সরকারি প্রকল্পগুলির তথ্য জানাতে দেশের জনজাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে প্রচার যান। সেগুলি এমন জায়গায় পাঠানো হবে, যেখানে মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য ঠিক ভাবে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। সামাজিক প্রকল্পের আওতায় আসার যোগ্যতা থাকলেও যাঁরা তা গ্রহণ করতে পারেননি, লোকসভা ভোটের মুখে এখন তাঁদের কাছেই পৌঁছনোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে শুধু তথ্য জানানোই নয়, যাঁরা বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার কথাও শুনতে চাইছেন মোদী। ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’-র আওতায় প্রয়োজনীয় আর্থিক পরিষেবা, রান্নার গ্যাসের সংযোগ, গরিবের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা, খাদ্যের নিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পানীয় জল, শিক্ষার প্রকল্পগুলিকে তুলে ধরা হবে। প্রচার চলবে এই সংক্রান্ত কুড়িটি সরকারি প্রকল্পগুলিকে নিয়ে। প্রথমে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় শুরু হয়ে পরে দেশের প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এবং প্রায় ১৪ হাজার এলাকার ৩৭০০টি পুরসভায় এই কর্মসূচি নেওয়া হবে। হিন্দি ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় সামাজিক প্রকল্পের তথ্য নিয়ে হাজির হবে মোদী সরকার। ভিডিয়ো মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে জবাব চাইতে পারবেন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে হাজির হওয়া মানুষ। এছাড়া, স্বাস্থ্য শিবির, আধার কার্ড তৈরি, চাষের বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতিও জানানো হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেওয়া— এসবেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন, পুরসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে চাইছে মোদী সরকার। বলা হচ্ছে, দেশের মানুষের কাছে ‘সামগ্রিক ভাবে সরকারকে তুলে ধরা’ এবং ‘জন ভাগিদারি’কে গুরুত্ব দিতেই
এই পরিকল্পনা।