বিজ্ঞান কংগ্রেসের রেজিস্ট্রেশন ফর্মে অংশগ্রহণকারীর লিঙ্গ পরিচয়ের জায়গায় শুধু পুরুষ ও মহিলার উল্লেখ রয়েছে। নেই তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ। প্রতীকী ছবি।
ভোটার কার্ড থেকে প্যান কার্ডে তাঁর পরিচয়, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। কিন্তু বিজ্ঞান কংগ্রেসের রেজিস্ট্রেশন ফর্মে অংশগ্রহণকারীর লিঙ্গ পরিচয়ের জায়গায় শুধু পুরুষ ও মহিলার উল্লেখ রয়েছে। নেই তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ। অথচ তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি পরিচয়েই ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে (আইএসসি) যোগ দিতে চান কলেজ-শিক্ষক দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য। কিন্তু বাদ সেধেছে বিজ্ঞান কংগ্রেসের নিয়ম!
পুরুষ বা মহিলা পরিচয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে আইএসসি-তে যোগদানের সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক দেবজ্যোতি। আইএসসি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্জিকিউটিভ সেক্রেটারি অরুণ পাণ্ডে বলেন, ‘‘অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের যে-কাজ হয়, তা দেখে প্রতিষ্ঠানের বেঙ্গালুরু দফতর। ওরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করবে।’’
দেবজ্যোতির দাবি, ‘‘রেজিস্ট্রেশন ফর্মে অংশগ্রহণকারীদের লিঙ্গ পরিচয়ে তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ না-থাকার বিষয়টি ফোন করে আইএসি-র বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, সংশোধিত ফর্ম এক দিনের মধ্যে আইএসসি-র ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সেখান অংশগ্রহণকারীদের লিঙ্গ পরিচয়ের জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ থাকবে। কিন্তু এখনও নতুন ফর্ম আইএসসি-র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি।’’ ওই শিক্ষক জানান, বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তিনি আইএসসি-কর্তৃপক্ষকে ই-মেল করেছেন। পাণ্ডে বলেন, ‘‘উনি ই-মেল যখন করেছেন, বেঙ্গালুরু কার্যালয় নিশ্চয় গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’’
আগামী ৩-৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে আইএসসি-র আসর বসবে। এর আগেও বহু বার ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন দেবজ্যোতি। কিন্তু এখন তিনি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। ভোটার কার্ড এবং প্যান কার্ডেও তাঁর এই লিঙ্গ পরিচয়ের উল্লেখ রয়েছে।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘এত দিন ভোটার পরিচয়পত্রে তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ না-থাকায় আমাকে অন্য পরিচয়ে সায়েন্স কংগ্রেসে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এখন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে আমার নাম নথিভুক্ত হয়েছে সরকারি সমস্ত নথিতে। তা হলে কেন আমি অন্য লিঙ্গপরিচয়ে ওখানে যাব?’’ তাঁর প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টও যেখানে তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আইএসসি-র মতো জাতীয় স্তরের অনুষ্ঠানে বৈষম্য থাকবে কেন? প্রেসিডেন্সি কলেজে শারীরবিদ্যায় স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেন দেবজ্যোতি। স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে মানবশরীরে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রে’-র প্রভাব নিয়ে পিএইচ ডি করছেন। এ বছর তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি পরিচয়ে দেবজ্যোতি কলেজে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন। উত্তীর্ণও হয়েছেন।