ছায়া শর্মা (বাঁ-দিকে) ও শেফালি শাহ।
তাঁদের এক জন নির্ভয়াকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে, বাস্তবে। জেনেছেন, তাঁর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। আর অন্য জন ওয়েব সিরিজে ফুটিয়ে তুলেছেন সেই চরিত্রকেই, যিনি নির্ভয়ার যন্ত্রণার সময়ে তাঁকে পাশে থাকার ভরসা দিয়ে গিয়েছেন।
প্রথম জন ছায়া শর্মা। দিল্লি পুলিশের (সাউথ ডিস্ট্রিক্ট) প্রাক্তন ডিসিপি, বর্তমানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিআইজি। আর দ্বিতীয় জন বলিউডের পরিচিত মুখ, শেফালি শাহ। নেটফ্লিক্সের ‘দিল্লি ক্রাইম’ সিরিজে ছায়ার ভূমিকায় (ভর্তিকা চতুর্বেদী) দেখা গিয়েছিল তাঁকেই।
১৯৯৯ সালের আইপিএস অফিসার ছায়ার কাছে প্রশ্ন ছিল, নির্ভয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনার তদন্তের বিপুল চাপ সামলালেন কী করে? ফোনে ছায়া বলেছেন, ‘‘এ ধরনের চাপ নেওয়ার মতো প্রশিক্ষণ আমাদের সবাইকেই দেওয়া হয়। তবে নির্ভয়ার ঘটনার আগেও বিভিন্ন জেলার অতিরিক্ত ডিসিপি এবং ডিসিপি হিসেবে দায়িত্ব সামলানো ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ক্রমাগত ওঠাবসার অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক পরিণত করেছে। আর বাহিনীর সিনিয়রদের ভরসা তো ছিলই।’’
আরও পড়ুন: ‘আমাদের অধিকার কে দেখবে?’ আদালতেই কেঁদে ফেললেন নির্ভয়ার মা
নিজের চাপ না হয় সামলে নেওয়া গেল। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার? তাঁদের মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতি যখন হয়? ছায়া বোঝালেন, ‘‘নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারকে সব সময়ে তদন্তের প্রতিটি ধাপ জানানো উচিত। সময়ের সঙ্গে আইনি ক্ষেত্রে যে যে প্রশ্নগুলো উঠছে, বলতে হবে সেটাও। তাতে তাঁরা ঠিক পথে এগোতে পারেন। মনে রাখা দরকার, আদালতের কাছে আমাদেরও জবাবদিহি করতে হয়। তাই সংবাদমাধ্যমের চাপ বা অন্য কোনও কিছুর চাপে নিজের পেশার নীতিগুলো ভুলে যাওয়া চলবে না।’’
আরও পড়ুন: পালিয়ে বাঁচা সাঁওতাল পরগনার মানুষ চান কাজ
সম্প্রতি হায়দরাবাদের ‘এনকাউন্টার’ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ছায়ার মতে, ‘‘মানুষের অধিকার রয়েছে নিজের মতো করে ভাবার। কিন্তু অনেক সময়েই ঘটনার প্রকৃত তথ্য এবং আইনি খুঁটিনাটি সম্পর্কে জনসচেতনতা থাকে না। পুলিশ ওই অপরাধীদের নিয়ে কী ধরনের অসুবিধের মুখোমুখি হচ্ছে, তা-ও তাঁদের বোঝার কথা নয়। সংবাদমাধ্যম বা সিনেমায় দেখে তাঁরা অনেক কিছু ভেবে নেন। কিন্তু আইনি পথ থেকে সরলে আমাদের চলবে না।’’ ছায়ার চরিত্রাভিনেত্রী শেফালির মত একটু ভিন্ন। তিনি বললেন, ‘‘আদালতের বিচারে নিশ্চয়ই আস্থা আছে। কিন্তু শাস্তিটাও দ্রুত দরকার। নইলে এই ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে কী ভাবে?’’ নির্ভয়ার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ তাঁর হয়নি, জানিয়ে শেফালি বলেছেন, ‘‘সন্তান হারানোর যন্ত্রণা যে কী... ভাষায় বোঝানো যায় না। আমার চোখে গোটাটাই একটা যন্ত্রণাদীর্ণ পথ, আবার একটা দীর্ঘ লড়াইয়েরও পথ। ভর্তিকার চরিত্র সেই লড়াইটাই করেছে।’’ শেফালি নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসিই চান। ছায়া বিষয়টা ছাড়তে চান আদালতের সিদ্ধান্তের উপরেই। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এ দিন ফাঁসির আদেশই বহাল রেখেছে।