ফাইল চিত্র।
মাস্ক পরা জরুরি। জনতা যদি মাস্ক পরে, তা হলে দিল্লিতে লকডাউন জারির কোনও প্রয়োজন পড়বে না। দিল্লিবাসীকে আজ এই আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে বিশেষ করে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মতো করে কিছু কিছু বিধিনিষেধ কার্যকর করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফের লকডাউন হবে কি না, তা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তাও রয়েছে। কেজরীওয়াল আজ এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘কোভিড বাড়তে থাকাটা উদ্বেগের বিষয়, কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। খুব কম সংখ্যক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মাস্ক পরাটা খুব জরুরি। আপনারা মাস্ক পরলে লকডাউন জারি করার দরকার পড়বে না। এখনও পর্যন্ত লকডাউনের কোনও পরিকল্পনাও নেই। জনজীবন যাতে ব্যাহত না হয়, সেই জন্য ন্যূনতম বিধিনিষেধ বলবৎ রাখাটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তায় কিছুটা ভরসা পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ থেকে মধ্য দিল্লির নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক সুধন মণ্ডল কিংবা ঝাড়খণ্ড থেকে যাওয়া রিকশাচালক স্বপন যাদবেরা। সুধন বলেন, ‘‘প্রথম লকডাউনটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। এখন যে সপ্তাহ-শেষের কার্ফু রয়েছে, সেটা সামলে নেওয়া যায়। আশা করি রোগ আর বাড়বে না।’’
কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ আজ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও কর্মী বিশেষ ভাবে সক্ষম বা সন্তানসম্ভবা হলে করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের অফিসে এসে কাজ করতে হবে না। তবে বাড়ি থেকে তাঁদের কাজ করতে হবে। কন্টেনমেন্ট এলাকায় কারও বাড়ি হলে ওই অঞ্চল গণ্ডিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদেরও অফিসে আসা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার নীচের স্তরের কর্মীদের উপস্থিতি পঞ্চাশ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের অফিসে হাজিরার দিন নির্দিষ্ট করে রস্টার তৈরি করা হবে। তবে বাড়ি থেকে যাঁরা কাজ করবেন, ফোনে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে অফিসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রাখতে হবে।
আজ বাড়তি ভয় ধরিয়েছে দিল্লি-লাগোয়া রাজ্য উত্তরপ্রদেশের কোভিড পরিসংখ্যান। করোনা বিধি রেখেই সেখানে ফেব্রুয়ারিতে ভোট করাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের সাপ্তাহিক সংক্রমণ এক সপ্তাহে ১৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে। গত রবিবারে উত্তরপ্রদেশে ৫৫২ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেই সংখ্যাই বেড়ে হয়েছে ৭৬৯৫। লখনউ এবং দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডা— দুই শহরেই দৈনিক সংক্রমণ হাজারের উপরে।
আজ মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। উদ্ধব সরকার গত কালই স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানা, বিনোদন পার্ক, জিম, বিউটি পার্লার— সমস্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছিল। তবে আজ সেই নির্দেশ সামান্য সংশোধন করে জিম এবং বিউটি পার্লারকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাস্ক পরে জিমে যাওয়া যাবে, তবে সেখানে লোকসংখ্যা ৫০ শতাংশ রাখতে হবে। চুল কাটার সেলুনের মতো অর্ধেক লোকসংখ্যা নিয়ে বিউটি পার্লারও খোলা থাকতে পারবে, কিন্তু কর্মী ও উপভোক্তাদের দু’টি ডোজ়ের টিকাকরণ বাধ্যতামূলক। উপরন্তু সেই সমস্ত পরিষেবাই শুধুমাত্র দেওয়া যাবে, যেগুলির ক্ষেত্রে মাস্ক খোলার প্রয়োজন পড়বে না।
তামিলনাড়ুতে আজ রাজ্য জুড়ে লকডাউন ছিল। বাস-মেট্রো বন্ধ ছিল। শহরতলির ট্রেন চলেছে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। রেস্তরাঁগুলিতে বসে খাওয়ার বন্দোবস্ত আজ রাখা হয়নি। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে দিনভর কড়া নজরদারি চালিয়েছে পুলিশ। হিমাচলপ্রদেশ সরকার সরকার জানিয়েছে, ওই রাজ্যে আগামিকাল থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যাবতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মীদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশে বেঁধে রেখে সরকারি অফিসগুলি সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্য, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা, জল, বিদ্যুতের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবার দফতরগুলিকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। জম্মুর সুচেতগড় সীমান্তে প্রতি সপ্তাহান্তেই ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ অনুষ্ঠান হত। কিন্তু কোভিড বাড়তে থাকায় আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে বলে বিএসএফ জানিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন আগামী কাল থেকে কলেজ পর্যন্ত যাবতীয় পঠন-পাঠন শুধুমাত্র অনলাইনেই হবে বলে আজ জানিয়েছে।
সরকারি সূত্রের দাবি, ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যে টিকাকরণের শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি আপাতত থাকবে না। এর জন্য কোউইন প্ল্যাটফর্মে ফিল্টার দেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচ রাজ্যে গত কাল থেকেই আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে।